গাজীপুরে পোশাক কারখানায় ৪শ শ্রমিক অসুস্থ, ছুটি ঘোষণা

প্রচণ্ড গরমে গাজীপুরের কোনাবাড়ি ও কাশিমপুর শিল্প এলাকার অন্তত দশটি পোশাক কারখানার প্রায় চারশ শ্রমিক অসুস্থ হয়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2017, 05:03 PM
Updated : 25 May 2017, 05:03 PM

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৃহস্পতিবার ওই এলাকার অধিকাংশ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে এ পরিস্থিতির কারণে ওই এলাকার পোশাক কারখানার মালিকরা রপ্তানি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল খালেক ও পোশাক শ্রমিকরা জানান, কোনাবাড়ির কাশিমপুর, জরুন, নয়পাড়া শিল্প এলাকার কারখানাগুলোর শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার সকালে কাজে যোগ দেয়। কাজে যোগ দেওয়ার আধঘণ্টা পর থেকে স্বাধীন গার্মেন্টস লিমিটেড, এবিএম ফ্যাশন, রিপন গার্মেন্টস, মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড, কটন ক্লাব বিডি লিমিটেড, মুনটেক্স, পালকি, তাসনিয়া ফ্যাব্রিক্স ও আলিম নিটওয়্যার লিমিটেডসহ অন্তত ১০টি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে বমি ভাব, মাথা ঘোরা ও পেট ব্যাথা শুরু হয়।

কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে ওই কারখানাগুলোর প্রায় চারশ শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে তারা জানান।

শ্রমিকরা জানান, এ ঘটনায় শ্রমিকদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়লে অন্য শ্রমিকরা কারখানার কাজ বন্ধ করে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নেয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই ১০টিসহ প্রায় সবকটি পোশাক কারখানায় দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

কোনাবাড়ী শরীফ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক বাবুল আহমেদ শরীফ বলেন, এটি ‘Hysterical conversion reactions disease’| এ রোগে একজন মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তাকে দেখে আরেকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে যাবে। তাছাড়া প্রচণ্ড গরমে কেউ হিটস্ট্রোক করলে একজনের দেখাদেখি অপরজনও মনে করবে তারও স্ট্রোক হয়েছে। সেও অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়তে পারে।

তবে অসুস্থদের অধিকাংশই চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে বলে জানান তিনি।

কাশিমপুর নয়াপাড়া এলাকার মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড পোশাক কারখানার মালিক মেজবাহ ফারুকী বলেন, এ কারখানায় প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করে। শ্রমিকদের চিকিৎসাসহ নিজস্ব সকল ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি কারখানা অভ্যন্তরে কুলিং প্যাডের মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে শীতল রাখার ব্যবস্থাও আছে।

“অথচসকালে কারখানায় কাজে যোগ দেওয়ার ১০/১৫ মিনিট পরই গরমের অজুহাতে কয়েক শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার কথা বলে। এদের দেখাদেখি আরও কয়েক শ্রমিক ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থতার ভান ধরে। এসময় কয়েক শ্রমিক হঠাৎ কারখানার সাইরেন বাজায়। এতে শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি শুরু করে।”

গত কয়েকদিন ধরে এ পরিস্থিতি অব্যহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে রপ্তানিমুখী এ কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। ঈদের প্রাক্কালে এ অবস্থা অব্যহত থাকলে বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পোশাক উৎপাদন করে তা সরবরাহ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, পোশাক কারখানার শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরাও ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। গত শনিবার থেকে প্রতিদিনই এ এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা অসুস্থ হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার স্থানীয় প্রায় সবকটি পোশাক কারখানা বেশ কিছু শ্রমিক অসুস্থ হয়।