দীর্ঘদিন ধরে নদী তীরবর্তি চিনিরপটল, সাথালিয়া, হলদিয়া ও বেড়াগ্রাম এলাকায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ২০১১ সালে যমুনার ভাঙন রোধে নদীর তীর সংরক্ষণে ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সাঘাটা বাজার ও সংলগ্ন এলাকা রক্ষা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কাজটি শেষ হয় ২০১৬ সালের জুন মাসে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর তীর ঘেঁষে চিনিরপটল এলাকায় পরপর পাঁচটি শ্যালো মেশিন বসিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সেই বালু পাইপের সাহায্যে নদীর তীরে স্তূপ করে জমা করা হচ্ছে। সেখান থেকে ট্রাক্টরে বালু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সাঘাটা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার ঠিকাদাররা।
একই চিত্র দেখা গেল সাথালিয়া ও হলদিয়া বেড়াগ্রামে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাঘাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও তার লোকজন সাঘাটা উপজেলার কাটাখালী নদীর ত্রিমোহনীঘাট, রামনগর আদর্শ গ্রাম সংলগ্ন এলাকা, সতীতলা ঘাট, ইলিয়াছের ঘাট, শংকরগঞ্জ ঘাট, যমুনা নদীর গোবিন্দী, হলদিয়া, হাসিলকান্দি, দক্ষিণ উল্যা (বড়মতাইড়) এলাকায় সারাবছরই নদীতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু তুলে বিক্রি করছেন।
চিনিরপটল গ্রামের ব্যবসায়ী মোজাহার আলী (৫৫) এবং ছদরুল মিয়া (৫০) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল ‘সাঘাটা বাজার রক্ষা প্রকল্প’। সর্বনাশা যমুনার ভয়াল গ্রাসে এ পর্যন্ত চারবার ভিটেমাটি হারিয়েছি। কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় গত দুইবছর থেকে এসব এলাকায় নদী ভাঙন বন্ধ আছে।
“এখন নদী তীর সংলগ্ন এলাকা থেকে যেভাবে প্রতিযোগিতা করে মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে, তাতে সামনের বন্যায় আবারো ভাঙনের কবলে পড়ে সাঘাটা বাজার, থানা কমপ্লেক্স, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, অনেক সরকারি বে-সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ কয়েকটি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।”
সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলুল হক বলেন, উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের ফলে ভাঙ্গণ রোধে নদীর তীরে ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের কাছে একাধিকবার জানিয়েও প্রতিকার মেলেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জহুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই বালু তোলা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার ঘোষ বলেন, “এ সংক্রান্ত কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।”
এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী চন্দ্র শেখর বলেন, এ বিষয়ে সাঘাটা থানায় একটি জিডি করা হয়েছে এবং অতি দ্রুত বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত শ্যালো মেশিনগুলি অপসারণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।
সাঘাটা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড নাম ঠিকানাবিহীন দায়সাড়া একটি জিডি করেছে। তারপরও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।