থানা থেকে আ. লীগের আসামি ছিনতাইয়ের অভিযোগ

নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে থানা থেকে দুই আসামিসহ চোরাচালানের মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2017, 01:42 PM
Updated : 19 May 2017, 01:42 PM

বৃহস্পতিবার রাতের এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের আট নেতাকমীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে রেলওয়ে থানা পুলিশ।

সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ওসি এ কে এম লুৎফর রহমান জানান, নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি ২১ মে থেকে রেলওয় পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসা ঢাকা-নীলফামারী রুটের আন্তনগর ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ ট্রেনে অভিযান চালানো হয়।

“অভিযানে চোরাই পথে ভারত থেকে আনা ১০২টি ফতুয়া, ফ্রক, ওড়না, গেঞ্জি জব্দ এবং চোরাকারবারী আলী হিরা (৫২) ও ফুলমনিকে (৫৫) আট করে রেলওয়ে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।”

ওসি লুৎফর বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে অতর্কিতভাবে সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর, সৈয়দপুর পৌর ও উপজেলা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন চোরাকারবারী থানায় হামলা চালিয়ে আটক দুই চোরাকারবারীসহ জব্দ করা ভারতীয় কাপড় ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা তাদের উপরও হামলা চালায় এবং তাতে তিন নারী পুলিশসহ আট পুলিশ সদস্য আহত হন, বলেন লুৎফর।

ওসি বলেন, থানায় আসা নেতাদের মধ্যে চিলেন সৈয়দপুর পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন গুড্ডু, পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু, সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক জোবায়দুর রহমান শাহীন ও সৈয়দপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম টিটু।

“এ সময় তারা আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দেন এবং আটকৃত দুই আসামিসহ জব্দকৃত মালামাল ছাড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। আমি অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে লাঞ্ছিত করে ডিউটি অফিসারের কক্ষে হামলা চালান।”

আহতরা হলেন কনস্টেবল রোজিনা আক্তার, নেহার আক্তার রিয়া ও ঔভলী বাইন, দুরুল হুদা ও এমদাদুল হক। তাদের সৈয়পুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান ওসি।

কর্তব্যরত পুলিশের এটিএসআই হাফিজুর রহমান বলেন, “কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ ৪০-৫০ জন চোরাকারবারী ওসি সাহেবকে লাঞ্ছিত করে অতর্কিতভাবে থানায় হামলা চালায়। আমরা বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের উপরও হামলা চালায়।”

কনস্টেবল সুচিত্রা রায় বলেন, “রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা আকষ্মিকভাবে আমাদের উপর হামলা চালিয়ে জোরপূর্বক দুই আসামিসহ মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে যায়।”

সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার্স) ফিরোজ আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের আট জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় ৪০-৫০ জনের নামে রাতেই সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদেরর গ্রেপ্তারর চেষ্টা চলছে।

সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সৈয়দপুর শহরের পাসপোর্টধারী হিরা ও ফুলমনিকে চোরাকারবারী আখ্যা দিয়ে রেলওয়ে পুলিশ অহেতুক তাদের আটক করে।

“তাদের কাছে বহনযোগ্য ভারতীয় কয়েকটি কাপড় থাকায় টাকা দাবি করে পুলিশ। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তাদেরকে থানায় নিয়ে আসে।

“আমরা বিষয়টি জানার জন্য থানায় যাই; কিন্তু সেখানে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সকল প্রমাণাদি থাকায় পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। আমরা থানা ত্যাগ করার পর  পুলিশ নিজেদের বাঁচার জন্য ছিনতাইয়ের ঘটনাটি সাজিয়েছে।”