খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে ষড়যন্ত্র দেখছেন মন্ত্রী

বাংলাদেশে খাদ্য পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে মনে করেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিরংপুর ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2017, 03:09 PM
Updated : 16 May 2017, 03:14 PM

চলমান গম ও বোরো সংগ্রহ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও চালকল মালিকদের সঙ্গে মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও ও রংপুরে মতবিনিময় সভায় এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।  

দেশে বর্তমানে চালের সঙ্কট নেই দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যাপ্ত চাল মজুদ রয়েছে। হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যায় বোরো ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে চালের বাজারে তার বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। 

“কিন্তু একশ্রেণির ব্যবসায়ী মজুতদার ও সরকারের বিরুদ্ধবাদী রাজনৈতিক দলের অনুসারী ও ব্যবসায়ীর যোগসাজসে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন, যা কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না।”

হাওর অঞ্চল থেকে তিন শতাংশ বোরো ফসল আসে। এবার এক কোটি ৯১ লাখ মেট্রিক টন বোরো ফসল উৎপাদনের আশা করা হয়েছিল; কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হাওর অঞ্চলের ছয় লাখ মেট্রিক টন ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

“হাওর অঞ্চলের ফসল প্রথম বাজারে আসে এবং এই ফসল বাজারটাকে স্থিতিশীল করে দেয়, কিন্তু এবার আমাদের দুর্ভাগ্য হাওর অঞ্চলের ধান আসে নাই।”

এর ফলশ্রুতিতে বাজারটাকে ঊর্ধ্বমুখী করতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও মিলমালিক বাজারটাকে অস্থিতিশীল করার সৃষ্টি করছে বলে দাবি করেন কামরুল।

ক্ষয়ক্ষতির থেকে প্রচারণা এমন বেশিভাবে চালানো হয়েছে, যাতে মানুষের মাঝে একটা শঙ্কা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে যে এবার বিরাট একটা খাদ্য সঙ্কটের সৃষ্টি হবে। এ কারণে চালের বাজারে ঊর্ধ্বগতি হয়েছে। এ পরিস্থিতি নিচে নামতে কিছুটা সময় লাগবে বলে তিনি মনে করেন।

কামরুল ইসলাম বলেন, “দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় বড় হেড লাইন দিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে- এবার আমরা চাল সংগ্রহ করতে পারছি না; মানে খুব নাজুক অবস্থা। বলা হয়েছে যে মিল মালিকদের সাথে আমাদের কোনো চুক্তি হচ্ছে না। মিল মালিকদের সাথে গতকাল পর্যন্ত আমাদের চুক্তি হয়েছে ছয় হাজার টনের বেশি; অথচ প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছে তিন হাজার টনের চুক্তি হওয়ার কথা।”

মানুষের মনে যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে এজন্য খাদ্য কর্মকর্তাদের সতর্কভাবে কাজ করার আহ্বান পরামর্শ দেন তিনি। সেইসঙ্গে চাল ও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য সকলকে কাজ করারও আহ্বান জানান।

এখন পর্যন্ত রংপুর বিভাগে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ ভাগ জমির বোরো ধান কাটা ও মাড়াই হয়েছে। তবে মোটা চাল এখনও বাজারে আসেনি। কাটা-মাড়াই শেষে মোটা চাল বাজারে এলে দাম অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে কামরুল বলেন, “ইতিপূর্বে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করেছেন। সে হিসাব আমার কাছে আছে। এ বছর হয়ত মুনাফা একটু কম হবে। সরকারকে সহযোগিতা করতে চাল সরবরাহ করবেন। সংগ্রহ অভিযান যাতে বিফলে না যায়, সেদিকটা খেয়াল রাখবেন।”

চাল সংগ্রহের পরিসংখ্যান তুলে ধরে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চলতি বোরো মওসুমে রংপুর বিভাগের আট জেলায় ২ লাখ ৮ হাজার ৫৫৯ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হবে। গত রোববার থেকে শুরু হওয়া সংগ্রহ অভিযানে মঙ্গলবার পর্যন্ত এ বিভাগের ১৩০ জন চালকল মালিক ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

বিকালে রংপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলা চালকল মালিক এবং খাদ্য বিভাগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্মারা উপস্থিত ছিলেন।    

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রায়হানুল কবীর বক্তব্য রাখেন।

দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য সেলিনা জাহান লিটা, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুল ইসলাম, রংপুর বিভাগের খাদ্য নিয়ন্ত্রক রায়হানুল কবীরসহ জেলা ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।