ঝিনাইদহে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে রাতের বিরতি  

ঝিনাইদহ সদরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে দুটি বাড়ি ঘিরে সকালে শুরু হওয়া অভিযান রাতের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2017, 01:12 PM
Updated : 16 May 2017, 01:15 PM

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঝিনাইদহ র‌্যাব-৬ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মনির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “অভিযান রাতের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সকালে আবার অভিযানে যাব আমরা।”

নিরাপত্তার স্বার্থে চুয়াডাঙ্গা গ্রামের ওই দুই বাড়ির আশপাশের এলাকায় জারি করা ১৪৪ ধারা এখনও বহাল রয়েছে বলে সদরের ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন।

সকাল ৭টার দিকে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে চুয়াডাঙ্গা গ্রামের দুই ভাই আতাউর রহমান ও মতিউর রহমানের দুই আধাপাকা বাড়ি ঘিরে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

দিনভর অভিযান চালিয়ে দুটি সুইসাইড ভেস্ট, পাঁচটি বোমা, ১৮টি ডিনামাইট স্টিক ও বোমা তৈরির ১৮৬টি সার্কিট বোর্ড উদ্ধার করা হয়।  

মেজর মনির জানান, জঙ্গিদের অবস্থানের তথ্য পেয়ে মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে দুই ভাইয়ের মালিকানাধীন আধাপাকা বাড়ি দুটি ঘিরে ফেলেন তারা। পরে বাড়ির আশপাশে তল্লাশির সময় বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরক পাওয়া যায়।  

র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ঝিনাইদহে কয়েকটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলায় র‌্যাবের গোয়েন্দারা নজর রাখছিলেন।

এর মধ্যে র‌্যাবের টহল দল সোমবার রাতে ওই গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে মো. সেলিম (৪৫) এবং মতিউর রহমানের ছেলে প্রান্তকে (২০) আটক করে।

র‌্যাব অধিনায়ক জানান, আতাউর ও মতিউর আপন ভাই। আতাউরের আরেক ছেলে তুহিন গত ৭ মে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামে এক জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত হন।

“সেলিম ও প্রান্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমাদের ধারণা হয়, তাদের বাড়িতে বিস্ফোরক থাকতে পারে। সেখানে জঙ্গিদেরও সন্ধান মিলতে পারে। এর ভিত্তিতেই সকালে আমাদের অভিযান শুরু হয়।”

দুই বাড়ি ঘিরে তল্লাশির মধ্যে প্রান্তদের বাড়ির বাঁশবাগান থেকে মাটিচাপা দেওয়া দুটি সুইসাইড ভেস্ট উদ্ধার করা হয়। পাশেই একটি জায়গায় চারটি বোমা এবং আরেক জায়গায় একটি বোমা পাওয়া যায় বলে ডিআইজি খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান।

মেজর মনির জানান, তল্লাশির সময় দুপুরের পর দুটি বাড়ি ও আশপাশ থেকে থেকে ১৮টি ডিনামাইট স্টিক ও বোমা তৈরির ১৮৬টি সার্কিট বোর্ড উদ্ধার করেন তারা।  

ঝিনাইদহে গত এক মাসে এ নিয়ে পাঁচটি জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পেল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

গত ২০ এপ্রিল সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামে আব্দুল্লাহ নামে ধর্মান্তরিত এক ব্যক্তির বাড়ি ঘিরে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। দুই দিনের অভিযান শেষে ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে ২০টি কেমিকেল কন্টেইনার, ছয়টি বোমা, তিনটি সুইসাইড ভেস্ট, নয়টি সুইসাইড বেল্টসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। 

এরপর গত ৫ মে মহেশপুর উপজেলায় এক বাড়িতে পুলিশের অভিযানে নব্য জেএমবির দুই জঙ্গি নিহত হন। আর সদর উপজেলার লেবুতলায় আরেক বাড়িতে পাওয়া যায় আটটি বোমা ও একটি ৯ এমএম পিস্তল।

এর মধ্যেই ২৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের 
সন্ধান পাওয়া যায়। ওই অভিযানে চারজন নিহত হন, বাড়িতে পাওয়া যায় অস্ত্র ও সুইসাইড ভেস্ট।

আর সর্বশেষ ১১ মে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এক জঙ্গি আস্তানা ঘিরে পুলিশের অভিযানে এক পরিবারের পাঁচজন নিহত হন, জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। ওই বাড়িতে পাওয়া যায় ১১টি বোমা ও একটি পিস্তল।