চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানার ওসি ফাছির উদ্দিন বলেন, ‘বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও আইটি বিশেষজ্ঞ’ আশরাফুল চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে পুলিশের তাড়া খেয়ে আগের দিন বেনীপুরের আস্তানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।
“আর ওই আস্তানায় আরেক আত্মঘাতী আলামিন ও নাচোলে গ্রেপ্তার হারুন-অর রশিদ ছিলেন জেএমবির ইউনিট কমান্ডার।”
হারুনের দেওয়া তথ্যে পুলিশ বেনীপুরের জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় বলে জানান ওসি ফাছির উদ্দিন।
গোদাগাড়ীর ওই জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহতা হলেন আশরাফুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন, তার স্ত্রী বেলী, তাদের ছেলে আলামিন ও মেয়ে কারিমা।
গোদাগাড়ী থানা পুলিশও আশরাফুলের এ পরিচয় পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
গোদাগাড়ী থানার ওমিস হিপজুর আলম জানান, জঙ্গি আস্তানায় আত্মসমর্পণকারী নারী সুমাইয়া আশরাফুল ইসলাম রাজশাহী অঞ্চলের জেএমবির কমান্ডার ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
আশরাফুল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার এবং আইটি ও বোমা তৈরিতে বিশেষজ্ঞ বলে সুমাইয়া জানিয়েছেন বলে জানান ওসি হিপজুর আলম।
“তার নেতৃত্বে রাজশাহী অঞ্চলে জেএমবি সংঘঠিত হতো এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ করত। আশরাফুল বোমা তৈরিতেও পারদর্শী ছিল।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের দেবীনগর ইউনিয়নের চর চাকলা গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে আশরাফুল কবে জেএমবিতে যোগ দিয়েছেন তা হারুন জানাতে পারেননি ওসি ফাছির উদ্দিন।
ওসি বলেন, বেনীপুরের জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী আলামিন ও নাচালে গ্রেপ্তার হারুন ছিলেন জেএমবির ইউনিট কমান্ডার।
আশরাফুলসহ জেএমবির নেতারা আলামিন ও হারুনের বাড়িতে গোপন বৈঠক করতেন বলে জানান ওসি।
গোদাগাড়ীর আস্তানার সন্ধান মেলে যেভাবে
গ্রেপ্তার জেএমবির ইউনিট কমান্ডার হারুন-অর-রশিদের তথ্যে এই জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলে বলে নাচোল থানা পুলিশের ভাষ্য।
নাচোল থানার ফাছির উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফেরি করে কাপড় বিক্রেতা সেজে জেএমবির প্রচার চালানোর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার প্রথম প্রহরে নাচোলের গুঠইল গ্রাম থেকে জেএমবির ইউনিট কমান্ডার হারুন-অর-রশিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ওই বাড়ি থেকে জেএমবি সদস্য কামাল উদ্দিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
“পরে হারুনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সাড়ে চার কেজি গান পাউডার ও ২২টি জিহাদি বই পাওয়া যায়।
ওসি জানান, ওই রাতেই হারুন ও কামালকে নিয়ে নাচোলের সাতটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানকালে বেড়াচকি গ্রাম থেকে ‘জেএমবি’ সদস্য নাসিম রেজা শাহীন ও শ্রীরামপুর গ্রামের ফিরোজকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই সাতটি বাড়ির কোনো একটিতে আশরাফুলের অবস্থান ছিল, কিন্তু হারুন গ্রেপ্তারের পর আশরাফুল রাতেই নাচোল থানা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় বলে জানান ওসি ফাছির উদ্দিন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তার হারুনসহ চারজনকে ১০ মে দিনভর নাচোল থানা হাজতে কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় হারুণ গোদাগাড়ীর বেনীপুরে আলামিনের বাড়িতে তাদের অস্ত্র ও বোমা রয়েছে জানান।
“এরপর বিষয়টি চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলামকে জানানো হয় এবং ওই রাতেই পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে চারজনকে নিয়ে গোদাগাড়ী যাওয়া হয়।”
তবে তখন পর্যন্ত ওই বাড়িতে আশরাফুল ছিল বলে তারা জানেনি বলে জানান ওসি ফাছির উদ্দিন।
ফাছির আরও বলেন, গোদাগাড়ী থেকে ফিরে পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে শিবগঞ্জে অভিযান চালানো হয়। হারুনের দেওয়া তথ্যে তারা উপজেলার শিবনগর কাইঠ্যাপাড়া গ্রামের বাবু, রাঘবপুর গ্রামের আজিজুল হক ও পরে সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের ফাটাপাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
“পরে দেবীনগর চর চাকলা গ্রামে আশরাফুলের বাড়িতেও অভিযান চালানো হলেও সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি। তবে বাবুর বাড়ি থেকে একটি ড্রামে পুঁতে রাখা ৪২০টি প্যাকেটে সাড়ে ৫২ কেজি বোমা তৈরির পাওয়ার জেল উদ্ধার করা হয়।”
গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যে জেএমবির রাজশাহী অঞ্চলের কয়েকজন নেতার নাম তারা পেয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান ওসি ফাছির।
বৃহস্পতিবার সকালে গোদাগাড়ীর বেনীপুরের মাঠে জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন ‘সান ডেভিল’ অভিযানের প্রস্তুতির সময় সাজ্জাদসহ পাঁচ জঙ্গি একসঙ্গে বের হয়ে এসে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের উপর হামলা চালায়। তারা দুইটি আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় পাঁচ জঙ্গি ও এক দমকল কর্মী নিহত হন। পরে দুই শিশুকে নিয়ে আত্মাসমর্পণ করেন নারী ‘জঙ্গি’ সুমাইয়া।