নবীনগর পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন কয়েকজন কাউন্সিলর।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিপীযূষ কান্তি আচার্য, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2017, 07:58 AM
Updated : 14 May 2017, 08:08 AM

পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ১০ কাউন্সিলর গত বৃহস্পতিবার মেয়র মাঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।  

মেয়র মাঈন উদ্দিন নবীনগর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অভিযোগকারীরা হলেন প্যানেল মেয়র কবির হোসেন, কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন, রমজান আলী, দ্বীন ইসলাম, যদুনাথ ঋষি, জাহাঙ্গীর আলম, রশিদা বেগম, আবু ছায়েদ, রেহেনা খাতুন ও আবু হানিফ।

অভিযোগে বলা হয়, মেয়র ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ ও ‘দুর্নীতি’ করে বিভিন্ন সময় পৌরসভার তহবিলের আত্মসাত করেন। ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর নবীনগর পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গত আড়াই বছরে তিনি কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন।  

মেয়র পৌরসভার তহবিল ‘শূন্যের কোঠায়’ নামিয়ে এনেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

কাউন্সিলরদের অভিযোগ, পৌসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝিকাড়া গ্রামের ইদন মিয়ার বাড়ি থেকে আলীয়াবাদ পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের নামে দরপত্র আহ্বান করা হলেও প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজ হয়নি। ওই দরপত্রের ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৯ টাকা মেয়র আত্মসাত করেছেন।  

ওই রাস্তা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য ফয়েজুর রহমান বাদল ব্যক্তিগত অর্থে আগেই বাস্তবায়ন করেছেন বলে তাদের দাবি। 

আরেক অভিযোগ হলো পৌরসভার নিজস্ব দুটি রোলার মেশিনের ভাড়া বাবদ ৩৬ লাখ টাকা এবং রাজস্ব তহবিল থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ১৩টি প্রকল্পের এক কোটি ৩৫ লাখ টাকার মধ্যে ৬২ লাখ টাকা আত্মসাত।  

পৌরসভার নয়টি কসাইখানা থেকে আদায়কৃত রাজস্বের এক লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং মাস্টাররোলে ১৭ কর্মচারীর নিয়োগ দেখিয়ে তাদের মাসিক বেতন বাবদ ৯৮ হাজার টাকাও আত্মসাতের অভিযোগ আনেন কাউন্সিলররা।  

মেয়র মাঈন উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্র করে একটি মহল আমাকে সমাজে হেয় করার জন্য কাউন্সিলরদের মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে ‘কাল্পনিক অভিযোগ’ করেছেন।

পাশাপাশি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পটির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেন, কাজ চলাকালে স্থানীয় সাংসদ বাদল তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। অন্যতম অভিযোগকারী রমজান আলী টেন্ডার কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ভালোভাবেই জানেন কাজ সঠিকভাবে হয়েছে।

এ ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলর রামজান আলী বলেন, মেয়র বিভিন্ন সময় কৌশলে তাকে দিয়ে জাল স্বাক্ষর করিয়ে টাকা আত্মসাত করেছেন। পৌর কর্তৃপক্ষের তহবিলে টাকা জামা নেই।

“তবে অভিযোগ দেওয়ার পর পে-অর্ডারের মাধ্যমে কিছু টাকা মেয়র ফেরত দিয়েছেন।”               

রোলার মেশিনের ভাড়ার টাকা আত্মসাতের অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।

মাস্টাররোলে কর্মচারী নিয়োগ না দেওয়া এবং ওই কর্মচারীর বেতনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র বলেন, তিনি যথানিয়মে কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন এবং তাদের বেতনও পরিশোধ করেছেন।

অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে মাঈন উদ্দিন বলেন, “অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে আমার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটি আমি মেনে নেব।”

জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মেয়রের বিরুদ্ধে কাউন্সিলররা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।