চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলার পর চোর ‘বানিয়ে’ পুলিশে

বগুড়ার শাজাহানপুরে জমি দখলের মামলা করায় এক কৃষককে চোর ‘বানিয়ে’ পুলিশে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2017, 01:25 PM
Updated : 13 May 2017, 01:25 PM

চুরির অভিযোগে জুসখোলা গ্রামের কৃষক মন্তেজার রহমান সরকারকে (৬৫) পিটিয়ে থানায় দিয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও স্থানীয় খোট্রপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ্ আল ফারুক।

মন্তেজারের ছেলে মিলন সরকার অভিযোগ করেন, শাজাহানপুর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মাসউদ চৌধুরী ঘটনাটি তদন্ত না করেই তার বাবাকে সারারাত থানা হাজতের বারান্দায় বসিয়ে রাখেন।

“আজ (শনিবার) বেলা ১১টায় ঘটনাটি সাংবাদিকরা জানতে পারলে তিনি তখন তদন্তের জন্য একজন এসআইকে তাদের গ্রামে পাঠান।”

তিনি বলেন, “গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে আবদুল্লাহ্ আল ফারুক ভোটের বিনিময়ে জুজখোলা-কানিপাড়া এলাকার লোকজনকে রাস্তা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আমার পৈত্রিক আবাদী জমি দখল করে ইট বসিয়ে মোস্তাইল-জুজখোলা সড়ক থেকে জুজখোলা কানিপাড়া পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করেন।

“এরপর জায়গা দখলের বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চেয়ারম্যান ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হায়দার আলীসহ পাঁচজনকে বিবাদী আদালতে অভিযোগ করি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।”

মিলন বলেন, “বৃহস্পতিবার সমনের নোটিশ পেয়ে ক্ষিপ্ত হন ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাজারে যাওয়ার সময় চেয়ারম্যান ফারুক ও ইউপি সদস্য হায়দার আলী বাবাকে মারধরের পর ইউনিয়ন পরিষদে ধরে নিয়ে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন।”

মন্তেজার বলেন, “শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর মোস্তাইল বাজারত যাচ্চুনু চা খাবার। বাজারত যেই পৌঁচিচি, চিয়ারম্যান ফারুক হঠাৎ করে আসে হামার দু গালত চর মারবার শুরু করলো। এরপর হায়দার মিম্বার কয়, শালা, কেস করা তোর বার করিচ্চি।

“এরপর ইউনিয়ন পরিষদে ধরে লিয়ে গেল। লাঠিহাতে ভয় দেকায়ে একশ টেকার তিনডা স্ট্যাম্পত সই লিল। এরপর চৌকিদার বক্কর এবং মান্নানকে দিয়া থানাত দিল। একন শুনিচ্চি হামার পুরানো সাইকেলডা হামি নাকি চুরি করিচি।”

মিলন বলেন, “বাবাকে পুলিশ থানায় আটকে রাখার সুযোগে শনিবার সকালে চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে আদালতের সমনজারি করা জমি দখল করে রাস্তা নির্মাণ করেন। গ্রামের মানুষ এসব দেখলেও চেয়ারম্যানের সঙ্গে ক্যাডার বাহিনী থাকায় ভয়ে কেউ বাধা দেয়নি।”

কৃষককে মারধরের কথা স্বীকার করে চেয়ারম্যান বলেন, “সাইকেল চুরি করায় তাকে দুই/ চারটা থাপ্পড় মেরে চৌকিদার দিয়ে থানায় দিয়েছি।

“তবে ইউনিয়ন পরিষদে এনে ভয়ভীতি দেখিয়ে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে কোনো স্বাক্ষর নেইনি। তাছাড়া থানায় আটকে রেখে তার জমি দখল করে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগও সত্যি নয়।”

সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুসখোলা গ্রামের কৃষক মন্তেজার রহমান সরকার নিজের ক্ষেত তিনি নিজেই করেন। তার ২০ বিঘা জমি রয়েছে। দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি সেগুলো দেখাশোনা করেন। এরমধ্যে মোস্তাইল-জুজখোলা সড়কের একপাশের মাঠে অর্ধেক জমি এবং অন্যপাশে অর্ধেক জমিতে তিনি বোরো ধান চাষ করেছেন। বোরোতে সেচ দেওয়ার জন্য একখণ্ড জমির কোণে বসিয়েছেন বিদ্যুৎ চালিত অগভীর নলকূপ।

ওই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, “মন্তেজার এলাকার অবস্থা সম্পন্ন কৃষক। ভালো লোক হিসেবে তার সুনাম আছে। যে সাইকেল চুরির কথা বলা হচ্ছে কমপক্ষে ২০ বছর ধরে তাকে ওই সাইকেল নিয়ে পথে ঘাটে চলাফেরা করতে দেখেছি।”

এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মাসউদ চৌধুরী বলেন, একটি পুরোনো বাইসাইকেলসহ রাতে মন্তেজার নামে ওই লোককে চৌকিদারের মাধ্যমে খোট্রাপাড়ার চেয়ারম্যান থানায় পাঠিয়েছেন।

“চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তিনি সাইকেল চোর।”

অভিযোগ তদন্তে উপ পরিদর্শক কালাচাঁদ ঘোষকে পাঠানো হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে কি না তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।