ভারত চলে যাবে বলেও রেহাই পাননি বিধবা কাননবালা

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার পূর্ব আলীপুর গ্রামের বিধবা কাননবালা দাসকে হাত-পা বেঁধে লাথি-কিলঘুষি মারতে মারতে বিবস্ত্র করেছে ভিটেমাটি দখল করতে আসা স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

পটুয়াখালী প্রতিনিধিসঞ্জয় কুমার দাস, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2017, 04:07 PM
Updated : 12 May 2017, 04:07 PM

কাননবালার অভিযোগ, গত সোমবার তাদের ভিটামাটিসহ ৭৯ শতাংশ জমি দখল করতে আসে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরা। এতে বাধা দেওয়ায় তারা পিটিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায়।      

‘ওগো কাছে কতবার পাও ধইরা মাফ চাইছি। বাড়িঘর ছাইড়া ভারতে চইলা যামু কইছি, তা-ও ওরা আমারে মাটিতে পাড়াইয়া ধরে।’

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কাননবালা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দশমিনা থানায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছেন কাননবালার ছেলে অসীম চন্দ্র দাস।

দশমিনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইউনুচ আলী বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আহত কানন বালাকে ‘বিবস্ত্র’ অবস্থায় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে তাকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তিনি জানান, কাননবালার ছেলে বাদী হয়ে শ্লীলতাহানি, অনধিকার প্রবেশ, মারধর, প্রাণনাশের হুমকি, চুরিসহ কয়েকটি অভিযোগে ১৪ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

“আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ ওই বাড়িতে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।”

অসীম চন্দ্র দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় উপজেলা সদরে ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশপাশের এলাকায় তাদের মোটরসাইকেল মহড়ায় সেখানে ভর্তি করতে না পেরে তার মাকে সোমবার সন্ধ্যায় পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন।

অসীম চন্দ্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবার সকাল ৭টার দিকে একই এলাকার মৃত আব্দুল আলী প্যাদার ছেলে আবুল হোসেন প্যাদা, তার ভাই বারেক প্যাদা, শহীদুল প্যাদা ও বারেক প্যাদার ছেলে সাইফুল প্যাদাসহ লোকজন নিয়ে তাদের বাড়ি ঢুকে গাছপালা কাটতে থাকেন এবং পরে সেখানে নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

এ সময় তার মা কাননবালা ছাড়া আর কেউই বাড়ি ছিলেন না উল্লেখ করে অসীম বলেন, সরকারের বন্দোবস্তকৃত ৬০ শতাংশ জমি ও নিজেদের রেকর্ডভুক্ত জমির পরিমাণ ১৯ শতাংশ। এই সম্পত্তিতে তাদের বসতঘর, পুকুর ও গাছপালা রয়েছে।

গত বছর তার বাবা অতুল চন্দ্র দাস মারা যাওয়ার পর থেকেই আবুল হোসেন প্যাদার লোকজন তাদের এই সম্পত্তি দখলের জন্য নানাভাবে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। সম্পত্তি না দিলে দেশছাড়া করা হবে বলেও হুমকি দেয় বলে অসীমের অভিযোগ।

“এখন আসামিদের ভয়ে আমারা সব সময় আতংকিত থাকি।”

কাননবালা সাংবাদিকদের বলেন, দশমিনা উপজেলার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে তার ছেলে অসীম নৈশপ্রহরী ও পুত্রবধূ মাধবী রানী ঝাড়ুদারের কাজ করেন। তার এক ছেলে ও চার মেয়ে। চার মেয়ের বিয়ে হওয়ায় তারা শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। আর ছেলে ও ছেলে বউ চাকরির সুবাদে ঘটনার দিন বাড়ি ছিলেন না।

এ সময় তিনি বাধা দিলে আবুল হোসেন ও তার লোকজন তাকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে। তিনি মাটিতে পড়ে গেলে রশি দিয়ে দুই পা এবং হাত ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলে। তাকে উপর্যুপরি লাথি-কিল-ঘুষি মারতে থাকে দখলদাররা। পদদলিত করার এক পর্যায়ে তিনি বিবস্ত্র হয়ে পড়েন বলে জানান কাননবালা।

দুপুরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান এবং সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

এ বিয়য়ে আবুল হোসেন প্যাদার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।