জামায়াতকর্মী থেকে দুর্ধর্ষ জঙ্গি গোদাগাড়ীর সাজ্জাদ

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে যে বাড়িতে অভিযানের প্রস্তুতির মধ্যে পুলিশের ওপর হামলা হয়, সেই বাড়ির মালিক সাজ্জাদ হোসেন এক সময় জামায়াতে ইসলামীর কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। পরে জামাতার উৎসাহে জেএমবিতে যোগ দেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2017, 10:16 AM
Updated : 12 May 2017, 08:46 AM

রাজশাহী শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে মাছমারা বেনীপুর গ্রামে মাঠের মধ্যে মাস দুই আগে বাঁশ আর টিন দিয়ে সাজ্জাদ যে বাড়িটি তৈরি করেছেন, সেখানে বিভিন্ন সময় জেএমবির সদস্যরা আশ্রয় নিত বলেও স্থানীয়দের কাছে তথ্য পাওয়া গেছে।

এলাকার বাসিন্দা আব্দুল বারি বলেন, “সাজ্জাদ জামায়াতের কর্মী ছিল। কিন্তু বছর দুয়েক আগ থেকে তার চলাফেরা সন্দেহজনক হয়ে ওঠে। তার বাড়িতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন আসত। তারা কারা এমন প্রশ্নে কখনও জামাতার আত্মীয়, কখনও ঢাকার আত্মীয় বলে পরিচয় দিত।”

আব্দুল বারি বলেন, সাজ্জাদের জামাতা জহুরুল জেএমবির  বড় নেতা। বর্তমানে জহুরুল জেল হাজতে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাড়িটিতে অভিযানের প্রস্তুতির মধ্যে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওই পরিবারের সদস্যরা আত্মঘাতী হন।

নিহতদের মধ্যে বাড়ির মালিক সাজ্জাদ, তার স্ত্রী বেলী, দুই ছেলে আলামিন ও শোয়েব এবং এক মেয়ে কারিমা রয়েছেন বলে পুলিশের ধারণা। এছাড়া হামলায় আহত ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী হাসপাতালে মারা গেছেন।

সাজ্জাদের আরেক মেয়ে সুমাইয়া পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই সুমাইয়ার স্বামী জহুরুলের হাত ধরেই সাজ্জাদ জেএমবিতে নাম লেখান বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

তারা বলছেন, সাজ্জাদ স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে তাদের খুব একটা মেলামেশা ছিল না।

সাজ্জাদ গ্রামে গ্রামে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতেন। আর তার দুই ছেলে আলামিন ও শোয়েব করতেন কৃষিকাজ।

ধানক্ষেতের মধ্যে বিচ্ছিন্ন ওই বাড়ি স্থানীয়দের কাছে ‘আলামিনের বাড়ি’ হিসেবেই পরিচিত বলে জানান গোদাগাড়ী থানার ওসি হিফজুল আলম মুন্সি।

স্থানীয়রা বলছেন, এক সময়ের জামায়াতের সক্রিয় কর্মী সাজ্জাদ বছর দুয়েক আগে জেমএবিতে যোগ দেন। ফেরিওয়ালা বেশে সাইকেলে করে ঘোরার ছদ্মাবরণে তিনি আসলে জঙ্গি প্রচারণা চালাতেন।

গোদাগাড়ী সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে নিভৃত মাঠের মধ্যে তার বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা হিসেবে ব্যবহার হতো। স্থানীয়রা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসবে না ভেবেই এমন নিরিবিলি মাঠে বাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল। সম্প্রতি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে কোনঠাসা হয়ে পড়া জেএমবির সদস্যরা প্রায়ই ওই বাড়িতে আশ্রয় নিত বলেও তাদের ধারণা।

ওসি হিফজুল আলম মুন্সি বলেন, “সাজ্জাদ সম্পর্কে তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি টিম রাজশাহীতে এসে এ জঙ্গি আস্তানা সনাক্ত করে। তারপর আমরা অভিযান পরিচালনা করি। “সাজ্জাদের বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেছি। এলাকায় জামায়াত করত বলে লোকজন বলছে। তার জামাই জহুরুল জেএমবির সদস্য। এর বাইরেও কিছু তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি।”