বৃহস্পতিবার সকালে গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের হাবাসপুর মাছমারা বেনীপুর গ্রামে এ ঘটনায় বোমার স্প্লিটার ও জঙ্গিদের হামলায় সাত পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে গোদাগাড়ী থানার ওসি হিফজুল আলম মুন্সি জানিয়েছেন।
রাজশাহী রেঞ্জের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, নিহত পাঁচ জঙ্গির লাশ বাড়ির সামনেই পড়ে আছে। তাদের মধ্যে ওই বাড়ির মালিক সাজ্জাদ হোসেন, তার স্ত্রী বেলী, তাদের ছেলে আলামিন, মেয়ে কারিমা এবং আশরাফুল নামের এক জঙ্গি রয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।
পুলিশ সদস্যরা জানান, অভিযানের প্রস্তুতির মধ্যে আত্মসমর্পণের আহ্বান উপেক্ষা করে সকাল পৌনে ৮টার দিকে ওই বাড়ি থেকে কয়েকজন বেরিয়ে আসে এবং বাইরে থাকা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
এ সময় ধারালো অস্ত্র হাতে এক নারী জঙ্গিকে দেখা যায় এলোপাতাড়ি কোপাতে। আহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ফায়ারম্যান আবদুল মতিন পরে হাসপাতালে মারা যান।
ওসি হিফজুল আলম বলেছেন, জঙ্গিদের মৃত্যু হয়েছে ‘আত্মঘাতী বিস্ফোরণে’। তবে হামলার মুখে অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যদের গুলিও ছুড়তে দেখা গেছে।
ওসি জানান, ওই হামলা ও বিস্ফোরণের আগে সুমাইয়ার তিন মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে তার আট বছর বয়সী ছেলে। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে নেয়।
রাজশাহী শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে মাছমারা বেনীপুর গ্রামে মাঠের মধ্যে মাস দুই আগে বাঁশ আর টিন দিয়ে ওই ঘর তোলা হয় বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
তারা বলছেন, বাড়ির মালিক সাজ্জাদ হোসেন তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে তাদের খুব একটা মেলামেশা ছিল না।
তিনি বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তথ্য পেয়ে বুধবার রাত ৩টার দিকে থানা পুলিশের সদস্যরা ওই বাড়ি ঘিরে ফেলেন। সেখানে ছয়জন জঙ্গি থাকতে পারে বলে তথ্য ছিল তাদের কাছে।
“সকালে ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার জন্য হ্যান্ড মাইকে জঙ্গিদের আহ্বান জানানো হয়। জবাবে বাড়ি থেকে দুই রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়।”
এরপর পুলিশ সেখানে অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ওই বাড়িতে পানি ছিটানো শুরু করলে এক শিশুকে কোলে নিয়ে আরেক বালককে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
“সকাল পৌনে ৮টার দিকে হঠাৎ কয়েকজন বেরিয়ে আসে এবং পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে জঙ্গিরা আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়,” বলেন ওসি।
মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আজম তৌহিদ জানান, সাজ্জাদের মেয়ে সুমাইয়ার স্বামী জহুরুল জঙ্গি সংগঠন জেএমবির কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত চারমাস ধরে কারাগারে আছেন।
জহুরুলের বাড়ি গোদাগাড়ির দিয়ার মানিকচরে। এক সময় এলাকার মানুষ তাকে ‘পল্লী চিকিৎসক’ হিসেবে চিনলেও পরে তিনি জেএমবিতে জড়ান বলে চেয়ারম্যান আজমের ভাষ্য।
এরপর এপ্রিলের ২০ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলায় পাঁচটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর অভিযান চালালো পুলিশ।
এর মধ্যে ২০ এপ্রিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামে আব্দুল্লাহ নামে ধর্মান্তরিত এক ব্যক্তির বাড়ি ঘিরে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।
ওই অভিযানের এক সপ্তাহের মাথায় ২৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের আরেক জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে চারজন নিহত হয়।
সর্বশেষ গত ৭ মে ঝিনাইদহের আরও দুটি বাড়ি ঘিরে অভিযান চলে। এর মধ্যে মহেশপুর উপজেলার এক বাড়িতে নিহত হয় নব্য জেএমবির দুই জঙ্গি। আর সদর উপজেলার লেবুতলায় অন্য আস্তানায় পাওয়া যায় অস্ত্র ও বোমা।