কুড়িগ্রামে সেতু নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ  

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে ফুলকুমর নদের ওপর সেতু তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তা ও একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2017, 10:52 AM
Updated : 5 May 2017, 10:52 AM

স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে বৃহস্পতিবার শ্রমিক ও এলজিইডির এক প্রকৌশলী কাজ বন্ধ করে পালিয়ে যান। 

এ ঘটনায় প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মোবাইদুল ইসলামকে শুক্রবার কাজ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং দুর্নীতির অভিযোগের কারণ ব্যাখা করতে বলা হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘যথাযথ নিয়ম না মেনে নিম্নমানের উপাদান’ দিয়ে সেতু নির্মাণের কাজ চলছিল, যা পরবর্তীতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

এদিকে এলজিইডির কুড়িগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেতু নির্মাণে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি সেতু নির্মাণের কাজও দ্রুত শুরুর আশ্বাস দেন।

ভুরুঙ্গামারী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ‘রংপুর ডিভিশন রুরাল ইনফেকশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের’ আওতায় ২ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৬০ টাকা ব্যয়ে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের থানাঘাট এলাকায় ফুলকুমর নদের ওপর ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর কাজ শুরু হয়। 

তিনি জানান, এর মধ্যে এক কোটি ৬৩ লাখ চার হাজার টাকার দরপত্রে কুড়িগ্রামের ‘উজ্জ্বল কুমার দে’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন ওয়াহেদুজ্জামান, যিনি একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা।

সম্প্রতি শুরু হওয়া সেতুর পাইলিংয়ের (ভিত্তি) কাজ দেখতে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজে স্থানীয়রা অনিয়ম দেখতে পান বলে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে খোকন জানান।

খোকন বলেন,এ বিষয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- সেতু নির্মাণে প্রায় ৮১ ফুট পাইলিং করে তিনটি রডের খাঁচা ব্যবহার করার কথা ছিল; কিন্তু পাইলিংয়ে ৩০ ফুট উচ্চতার একটি রডের খাঁচা বসানো হয় বলে তারা দেখতে পান।

“স্থানীয়রা আরও জানান-এছাড়া সিমেন্ট ব্যবহার না করে শুধু বালু আর পাথর দিয়ে ওই পাইলিংয়ের কাজ করা হয়েছে। ঢালাইয়ে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র ছয় ফুট অংশে।

“পরে স্থানীয়দের বাধার মুখে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কাজ ফেলে শ্রমিক ও এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোবাইদুল ইসলাম পালিয়ে যান।”

অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নির্মাণ শ্রমিক রহিম সাদু বলেন, “আমাদের যেভাবে কাজ করার জন্য ঠিকাদার নির্দেশনা দিয়েছে সেভাবে আমরা কাজ করেছি। এর আগে আরও ১৭টি পাইলিংয়ের কাজ একইভাবে করা হয়েছে।”

মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী, আয়নাল হক জানান, ঠিকাদারের প্রতিনিধি ওয়াহেদুজ্জামান দলীয় প্রভাবে এলজিইডির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সেতুর নিম্নমানের কাজ করছেন তার খেয়াল খুশি মতো।

স্থানীয় আজিজুল হক, ইমদাদুল হক, শাহিন আলম, শরিফসহ আরও অনেকের অভিযোগ, ঠিকাদার আর এলজিইডির কর্মকর্তারা মিলে যে সেতু তৈরি করছে তাতে উপকার না হয়ে বরং ভবিষ্যতে মরণ ফাঁদে পরিণত হবে।

অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারের প্রতিনিধি ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, “সেতুর কাজ ঠিকই চলছিল। কিছু লোক সমস্যাটা তৈরি করেছে।”

তবে সমস্যার বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

এদিকে ঘটনার পর তথ্য জানতে উপজেলা এলজিইডি অফিসে গেলে তথ্য দিতে গড়িমসি করেন কর্মকর্তারা। উপসহকারী প্রকৌশলী মোবাইদুল ইসলাম পালিয়ে যাওয়ায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা য়ায়নি।

এলজিইডির ভুরুঙ্গামারী উপজেলা প্রকৌশলী এন্তাজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঠিকাদারের লোকজন অনিয়ম করতেই ইঞ্জিনিয়ারের অনুমতি ছাড়া এ কাজ করছিলেন।”

তিনি জানান, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর মোবাইদুল ইসলামকে প্রকল্প কাজ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাকে এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

এলজিইডির কুড়িগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরেজমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে; জড়িতদের বিরুদ্ধে দাপ্তরিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

তবে সেতুর কাজ চলবে বলে জানান তিনি।