ট্রেনের নিচে বাবা-মেয়ে: পুলিশের গাফিলতি তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি

গাজীপুরে ট্রেনের নিচে মেয়েসহ বাবার মৃত্যুর ঘটনা ‘বিচার না পাওয়ায় আত্মহত্যা’ বলে অভিযোগ ওঠার পর পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2017, 07:56 AM
Updated : 2 May 2017, 07:56 AM

জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ সোমবার রাতে তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটি করে দেন বলে তার কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মোমিনুল ইসলাম জানান।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গোলাম সবুরের নেতৃত্বে এই তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন শ্রীপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাহেদুল ইসলাম এবং পরিদর্শক মোমিনুল।

শ্রীপুর উপজেলার কর্ণপুর ভিটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী (৪৫) ও মেয়ে আয়েশা (৮) শনিবার ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান বলে জানিয়েছিলেন শ্রীপুর রেলস্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান মিয়া।

কিন্তু হযরত আলীর স্ত্রী হালিমা বেগমের অভিযোগ, জমি দখল ও মেয়েকে ধর্ষণচেষ্টার বিচার না পাওয়ায় তার স্বামী মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সালিশের নামে বিচার থেকে বঞ্চিত করেছেন অভিযোগ করে হালিমা ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে থানায় একটি মামলাও করেন, যাতে গোসিঙ্গা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল হোসেনসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।

পুলিশ আবুল হোসেনকে আটক করলে সোমবার ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে পাঠায়।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, “একধরনের স্বার্থান্বেষী মহল যারা দীর্ঘদিন ধরে হযরত আলীর জমি দখলের চেষ্টা করেছিল, যারা তার মেয়েকে লাঞ্ছিত করেছে, তারা এ আত্মহত্যার জন্য দায়ী।

“যাদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেনি। ধর্ষণচেষ্টার মামলায় যারা সালিশ করতে চেয়েছেন, সেই জনপ্রতিনিধিরা এ দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।”

কাজী রিয়াজুল হক তার অনুসন্ধান সম্পর্কে বলেন, “পুলিশ প্রশাসন এ ঘটনার পর কোনো অ্যাকশনে যায়নি। তারাও দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারে না। এ জন্য আমি মনে করি, এখানে যে অবহেলা হয়েছে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ফৌজদারি অপরাধ।”

তবে শ্রীপুর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলছেন, হযরত আলী একখণ্ড খাসজমিতে ঘর তুলে বসবাস করতেন। তিনি সেখানে গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করতেন। বিভিন্ন সময় তার গরু মানুষের ক্ষেতের ফসল খেয়ে ফেলত। এ নিয়ে এলাকার মানুষের সঙ্গে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়।

“হযরত আলী গত জানুয়ারি মাসে থানায় মারধর ও হুমকির কথা জানিয়ে কয়েকজনের নামে জিডি করেন। কিন্তু তদন্তে সত্যতা মেলেনি।”

জিডি করার পর হয়রত আলী আর কখনও থানায় যাননি দাবি করে ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, “হযরত আলী এর আগে বিভিন্ন সময় গাছে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে এলাকাবাসীর কাছে শুনেছি। শনিবার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন নাকি দুর্ঘটনা তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।”