কক্সবাজারে হোটেলে আ. লীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ

কক্সবাজার শহরে একটি আবাসিক হোটেল থেকে এক আওয়ামী লীগ নেতার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2017, 04:06 PM
Updated : 30 April 2017, 04:06 PM

রোববার বিকালে শহরের লালদিঘীর পাড় এলাকার হোটেল পালংক্যি থেকে ইসমাঈল মেহেদী ওরফে ডাক্তার ইসমাঈলের (৫০) লাশ উদ্ধার করা হয় বলে কক্সবাজার থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান।

মৃত ইসমাঈল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহাজন ঘোনা (মসজিদ ঘোনা) এলাকার মৃত গোলাম রসুল মোল্লার ছেলে।

তিনি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং গত কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। কয়েকদিন পর আবার কাউন্সিল হওয়ার কথা রয়েছে।

ইসমাঈল উত্তরবঙ্গের মানুষ হলেও বিয়ের সূত্রে দীর্ঘদিন ধরে নাইক্ষ্যংছড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হোটেল পালংক্যির ম্যানেজার ও এক কর্মচারীকে আটক করেছে পুলিশ।

ওসি আসলাম বলেন, হোটেলের রুম চেক আউটের সময় পেরিয়ে গেলেও বিকাল পর্যন্ত ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে হোটেলের দ্বিতীয় তলার ১০৭ নম্বর কক্ষের দরজা ভেঙে মৃতদেহটি উদ্ধার করে।

“দরজাটি ভেতর থেকে আটকানো অবস্থায় থাকায় পুলিশ তা ভেঙে প্রবেশ করতে হয়। এ সময় ইসমাঈলের মৃতদেহটি রশিতে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল।”

পুলিশ মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে বলে জানান তিনি।

হোটেল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আসলাম জানান, ইসমাঈল তিন দিন আগে হোটেলে ওঠেন। শনিবার রাতে হোটেল কক্ষে ঢোকার পর থেকে তিনি বের হননি বলে হোটেলের কর্মচারীরা জানিয়েছেন।

তার মৃত্যুর কারণ জানতে পুলিশ খোঁজ-খবর নিচ্ছে বলে জানান ওসি।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহীন মোহাম্মদ আব্দুর রহমান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আত্মহত্যা করলে সাধারণত জিহ্বা বের করা অবস্থায় থাকে। এক্ষেত্রে তা হয়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে।

লাশ উদ্ধারের অন্তত একুশ ঘণ্টা আগে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিল ও সম্মেলন নিয়ে তিনি ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

এর আগে শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) ফেইসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাসে নানা হুমকি-ধমকির মাঝে জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠার কথা লেখেন তিনি।

স্ট্যাটাসে তিনি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকির কথা লেখেন। 

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আবু তাহের বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীরা কয়েকটি প্যানেলভুক্ত হয়ে প্রচার চালাচ্ছিলেন। তবে ইসমাঈল কোনো প্যানেলভুক্ত না হলেও নিজের মতো করে প্রচার চালান।

“এ নিয়ে কারো সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা না গেলেও দ্বন্ধ থাকতেই পারে।”

তিনি এই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

একই দাবি জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ ইমরান।

তিনি ইসমাঈলের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু বিচারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দলীয়ভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক শফিউল্লাহ হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, যা ফেইসবুকে লেখেন ইসমাঈল।

তিনি বলেন, “ইসমাঈল ফেইসবুকে প্রায় সময় এ ধরনের স্ট্যাটাস দিলেও আমি কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। আমি সভাপতি প্রার্থী আর ইসমাঈল ছিলেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। তাই পদ-পদবী নিয়ে তার সঙ্গে আমার বিরোধ থাকার কথা নয়।”

দলীয় নেতা-কর্মীদের সমর্থন আদায়ে তিনি এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করতেন বলে দাবি শপিউল্লাহর।

তিনিও এ মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন।