জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়ারেস আলী মিয়া বলেন, “ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা তাদের কাজ শেষ করার পর জঙ্গি আস্তানা থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে তাদের তিনজনকে চেনার উপায় নেই।”
এর আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঘিরে রাখা বাড়িটি থেকে বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা একটি সুইসাইড ভেস্ট ও একটি পিস্তল উদ্ধার করে বলে জানান জেলার পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম।
শিবগঞ্জের মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহিনী গ্রামের আমবাগান ঘেরা জেন্টু বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির আধাপাকা একটি বাড়ি জঙ্গি আস্তানা হিসেবে বুধবার সকালে ঘিরে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
সোয়াটের অভিযান শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেখানে চারজনের লাশ মেলে, যারা নিজেদের ঘটানো বিস্ফোরণে মারা যান বলে পুলিশ জানায়।
শিবগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুল ইসলাম জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে আবুর লাশ তার চাচা ইয়াসিন আলীর কাছে হস্তান্তর করা হলেও বাবা-মা কেউ না আসায় আবার ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়ারেস আলী মিয়া বলেন, “চারজনের মধ্যে শুধু আবুর লাশ অক্ষত আছে। অন্য তিনজনের দেহ ক্ষতবিক্ষত হওয়ায় তাদের চেনা যায়নি। তবে তাদের ডিএনএ পরীক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।”
“ওই বাড়িতে এখনও বোমা সদৃশ একটি বস্তু রয়েছে। বাড়িটি সিলগালা করলেও পুলিশ এখনও সেটি ঘিরে আছে। এলাকায় ১৪৪ ধারা অব্যাহত আছে। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম ও ক্রাইম সিন ইউনিট কাজ করছে,” বলেন তিনি।
বেলা দেড়টায় ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িটি চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। এলাকাবাসী বা সাংবাদিকদেরও বাড়ির কাছাকাছি যেতে দিচ্ছে না। ওই বাড়ির আশপাশের কয়েকটি বাড়িতেও অভিযান শুরু পর থেকে যেতে দেওয়া হয়নি বাসিন্দাদের।
স্থানীয়রা বলছে, জেন্টু বিশ্বাস তার ওই বাড়িতে আবুকে ভাড়া ছাড়াই থাকতে দিয়েছিলেন। ৭৫ বছর বয়সী জেন্টু বিশ্বাস এলাকার ধনী ব্যক্তি। নিজের পরিবার নিয়ে পাশের আরেকটি বাড়িতে থাকেন তিনি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘিরে রাখায় জেন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে উদ্ধার সুমাইয়া খাতুনের ডান পা ভেঙেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। এর আগে ওই পায়ে গুলি লেগেছিল বলেছিলেন চিকিৎসক।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের উপ-পরিচালক ডা. রেজাউল করিম একথা জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার দুপুরে সুমাইয়ার পায়ের এক্সরেসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন ‘বিশেষজ্ঞ’ চিকিৎসকরা।
“তার ডান পায়ের হাঁটুর একটি হাড় সামান্য ভেঙে গেছে। আঘাতজনিত কারণে হাড়টি ভেঙেছে। তাতে অপারেশনের প্রয়োজন নেই।”
হাড় ভাঙার কারণে প্লাস্টার করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান রেজাউল।
এর আগে সুমাইয়ার ওই পায়ে অপারেশন হবে বলে জানিয়েছিলেন রেজাউল।
তিনি বলেন, হাঁটুর যে স্থানে হাড় ভেঙেছে তার পাশে একটি ছোট আঘাতের চিহ্ন রয়েছে; যেটি শটগানের গুলির আঘাত হতে পারে বলে ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়া তার শরীরে আর কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
তিনি বলেন, হাসপাতালের ১৩ নম্বর কেবিনে সুমাইয়ার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য তিনজন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। চিকিৎসক ছাড়া সেখানে অন্যদের চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে পুলিশের।
সুমাইয়া ভালো আছেন বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোয়াটের অভিযানের সময় ওই বাড়ি থেকে আবুর স্ত্রী সুমাইয়া ও একটি মেয়েকে জীবিত ধরার পর সুমাইয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিবগঞ্জ উপজেলার চাচরা গ্রামের দিনমজুর আফসার আলীর ছেলে রফিকুল আলম আবু (৩০)।
একসময় মাদ্রাসায় পড়া আবু একজন ভ্রাম্যমাণ মসলা বিক্রেতা। ত্রিমোহনীর ওই বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে চাচরা গ্রামে নিজেদের বাড়িতে তার বাবা-মা থাকেন।
আবুর মা ফুলছানা বেগম বলেন, প্রায় নয় বছর আগে সুমাইয়া খাতুনের সঙ্গে বিয়ের পর একই উপজেলার আব্বাস বাজারে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন আবু।
ছেলেবেলায় আবু চাচরা গ্রামের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন বলে জানালেও কোন শ্রেণি পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেছেন - সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তার মা।
তিনি জানান, আবু দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।
মাস তিনেক ধরে আবু স্ত্রীসহ আট ও ছয় বছরের দুই মেয়ে নিয়ে সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাসের ওই বাড়িতে থাকছিলেন।