একদিকে তারা জানেন না কেন এভাবে চিংড়ি মারা যাচ্ছে, অপরদিকে কোনো প্রতিকারও করতে পারছেন না।
এভাবে চিংড়ি মরতে থাকলে চাষিরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশংকা করা হচ্ছে।
চিংড়ি চাষিরা জানান, গত দুই সপ্তাহে জেলার অধিকাংশ ঘেরে হঠাৎ চিংড়ির মড়ক দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত ঘেরের সংখ্যা বাড়ার খবর দিচ্ছেন তারা।
কী রোগে এভাবে চিংড়ি মরছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। তারা আক্রান্ত চিংড়ি সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছেন।
বাগেরহাট সদরের কাড়াপাড়া, ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের খোন্তাকাটা ও শশীখালীর বিলে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ঘেরে বাগদা চিংড়ি মরে রয়েছে। কোনো কোনো চাষি তার ঘেরের পানিতে নেমে মরা চিংড়ি তুলে উপরে ফেলে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ক্ষোভে ঘেরে নামছেনই না। মরে যাওয়া চিংড়ি লালচে বর্ণ ধারণ করছে।
চিংড়ি চাষি সরদার নাসির উদ্দিন এই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কয়েক বছর ধরে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া এলাকায় প্রায় আড়াইশ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে ফাল্গুন মাসের শেষ দিকে নদীর ও হ্যাচারির মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ পোনা ছাড়েন। তার ঘেরের বাগদা চিংড়ি ৬৬ গ্রেড হয়ে গিয়েছিল।
এতে তার কয়েক লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন তিনি।
চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট সদর, রামপাল, মংলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ ঘেরের বাগদা ও গলদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। তবে বাগদা চিংড়ির ঘেরে মড়কটা সবচেয়ে বেশি।
“প্রতি বছরই কমবেশি ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে চিংড়ি মরে থাকে; তবে এ বছর মড়ক মহামারী রপ ধারণ করেছে। এতে হাজার হাজার চাষি মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।”
জেলার অধিকাংশ চাষিরা চড়া সুদ ও ব্যাংকের ঝণ নিয়ে চিংড়ি করে থাকেন জানিয়ে তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে এমন বিপর্যয় চাষিকে সর্বশান্ত করবে।
এইসব চাষিদের তালিকা তৈরি করে সরকারকে সুদমুক্ত ঝণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
তারা অভিযোগ করেন, জেলার অধিকাংশ মানুষ কমবেশি চিংড়ি চাষ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে তারা কোনো না কোনো সমস্যায় পড়েড়ন, কিন্তু সংশ্লিষ্টরা তাদের এইসব সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো পথ দেখান না।
বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচ এম রাবিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চিংড়ি চাষিরা যে পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করেন তা পরিকল্পিত নয়। তাদের ঘের প্রস্তুতিতে সমস্যা রয়েছে, যার কারণে মৌসুমের শুরুতেই বাগদা ও গলদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে।
“ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে চিংড়ি মারা যাচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা মরা চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। পরীক্ষার পর কোন ধরনের ব্যকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপর তাদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হবে।”
চাষিদের অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট মৎস্য বিভাগের বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) জিয়া হায়দার চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বছর জেলার নয়টি উপজেলায় ৭০ হাজার ঘেরে চিংড়ির চাষ করা হয়েছে। চিংড়ির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন।
তিনি আরও বলেন, মৌসুমের শুরুতে এই এলাকায় বৃষ্টিপাত অনেক কম হয়েছে। অনাবৃষ্টি একটি কারণ; তাছাড়া ঘেরগুলোতে যে পরিমাণ পানি থাকার দরকার তা নেই। ফলে প্রচণ্ড তাপদাহে পানি গরম হয়ে অক্সিজেন কমে গেছে।
“তবে পরীক্ষা ছাড়া ক কারণে চিংড়িতে মড়ক লেগেছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। পরীক্ষা করতে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।”