ফসল না ওঠা পর্যন্ত ত্রাণ দেওয়া হবে: মন্ত্রী

আগামী বোরো ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত সরকার হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দেবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2017, 02:53 PM
Updated : 25 April 2017, 05:38 PM

এছাড়া এক বছরের জন্য হাওর এলাকার বিদ্যুৎ বিল স্থগিত রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতি আহবান জানান তিনি।  

মঙ্গলবার নেত্রকোণার মদন উপজেলার উচিতপুর ট্রলারঘাটে এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।

“ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মনোবল নষ্ট করার কোনো কারণ নেই। হাওর অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকাবাসী সচেষ্ট এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের সামর্থ্য রয়েছে।”

তিনি বলেন, হাওরের তিন লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে আগামী একশ দিন প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি চাল ও নগদ পাঁচশ টাকা করে দেওয়া হবে। এজন্য ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তবে যারা ত্রাণ নেবে না খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে ১০ টাকা কেজির চাল ও ওএমএস-এর মাধ্যমে ১৫ টাকা কেজির চাল আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত নিতে পারবেন বলে জানান মন্ত্রী।

মন্ত্রী আরও বলেন, হাওরাঞ্চলের সমস্যা চিহ্নিতকরণসহ ভবিষ্যতে যা করণীয় তা এ সরকার করবে। আগামী মৌসুমের শুরুতে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার ও কীটনাশক দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কৃষকদের ব্যাংক ঋণ আগামী এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি এনজিওর ঋণ ও বিদ্যুৎ বিল এক বছরের জন্য স্থগিত করারও আহবান জানান।  

মায়া বলেন, “কৃষকরা যদি ধান ‍তুলতে পারত সেই ধান বিক্রি করে বিদ্যুৎ বিল দিত। ধান তলিয়ে গেছে, বিল দেবে কোথা থেকে?

“পল্লী বিদ্যুৎ ও পিডিবিকে অনুরোধ করছি আগামী এক বছর এদের (হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক) বিদ্যুৎ বিলের জন্য কোনো রকম চাপ দেবেন না।”

আগামী এক বছর যেন হাওর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিদ্যুৎ বিল দিতে না হয় সে বিষয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে কৃষকদের ‘সুখবর’ দেওয়ার আশ্বাস দেন মন্ত্রী মায়া।

নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক মুশফিকুর রহমান জানান, তার জেলায় এক লাখ ৬৭ হাজার ১৮০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

“নেত্রকোণায় আবাদ হওয়া এক লাখ ৮৪ হাজার ৩২০ হেক্টর জমির মধ্যে ৬৯ হাজার ৭১০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে, মরে গেছে এক হাজার ১৮০ মেট্রিক টন মাছ,” বলেন তিনি।

এ মাসের শুরুতে অসময়ে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার বিস্তীর্ণ এলাকায় বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন লাখ লাখ কৃষক।

আগাম বন্যায় বোরো ফসলহানি ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে উচিতপুর ট্রলারঘাটে এ মতবিনিময় সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, রেবেকা মমিন, ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রশান্ত রায়, জেলা প্রশাসক মুশফিকুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তিনশ পরিবারের মাঝে প্রতি পরিবারকে ১৫ কেজি চাল ও পাঁচশ টাকা করে বিতরণ করে এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

এর আগে সকালে বারহাট্টা উপজেলায় বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা ও সরকার দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেন মন্ত্রী।

নেত্রকোণা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল জানান, টানা বর্ষণে আর উজানের পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণায় প্রায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ৬৪ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে অন্তত এক লাখ ৪০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

তিনি আরো জানান, এরই মাঝে জেলার হাওর এলাকার ৪০ হাজার হেক্টর জমির পুরো বোরো ফসলই নষ্ট হয়েছে। এখনও নেত্রকোণায় বর্ষণ চলছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জেলার বিল এলাকাসহ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে আরও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মুশফিকুর রহমান জানান, সোমবার পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের বরাদ্দের ৩৫৫ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ২৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।