বয়লার বিস্ফোরণে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, চলছে শোক

দিনাজপুর সদরে বয়লার বিস্ফোরণে দগ্ধদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দগ্ধদের মৃত্যুর খবর আসে, আর শুরু হয় স্বজনদের আহাজারি।

দিনাজপুর প্রতিনিধিমোর্শেদুর রহমান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2017, 01:04 PM
Updated : 24 April 2017, 02:12 PM

সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের উত্তর ভাবনীপুর গ্রামের এটি গত কয়েকদিনের একটি পরিচিত চিত্র।

গত বুধবার (১৯ এপ্রিল) দিনাজপুর সদরের রানীগঞ্জের (গোপালগঞ্জ) শেখহাটি এলাকায় ‘যমুনা অটো রাইস মিলে’ বয়লার বিস্ফোরণে ৩০ জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে ২৮ জনকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ২০ জনকে পাঠানো হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ পর্যন্ত সেখানে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এই ঘটনায় নিহত শ্রমিক রিপনের স্ত্রী মদিনা বেগম সোমবার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় মিল মালিক সুবল ঘোষসহ দুই কর্মচারী কমল ও একরামুলকে আসামি করা হয়েছে।

এই ঘটনায় এটিই প্রথম মামলা বলে কোতোয়ালি থানার ওসি রেদওয়ানুর রহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন। 

দগ্ধ ২০ জনের বাড়ি ভবানীপপুর গ্রামে। তাদের মধ্যে মারা গেছে আট জন।

দগ্ধদের মধ্যে চার জন এক পরিবারের, যাদের মধ্যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন, জহির উদ্দিনের ছেলে মকসেদ আলী, রুস্তম আলী, দোলেয়ার হোসেন। তার অপর ছেলে বাদল হোসেন রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থাও আশংকাজনক বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

দোলোয়ার হোসেনের লাশ সোমবার দাফন করা হয়েছে। এর আগে দুজনের মৃত্যুতে পরিবারে চলছিল আহাজারি। সকালে দেলোয়ারের লাশ বাড়ি পৌঁছলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। 

দোলোয়ারের দাফনে অংশ নিতে আসা যমুনা অটো মিলের বয়লার অপারেটর সফিকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বয়লারে আগে থেকেই ত্রুটি ছিল। বিষয়টি মালিককে একাধিকবার জানানো হলেও তিনি গুরুত্ব দেননি। ঘটনার সময় তিনি (সফিকুল) দূরে থাকায় বেঁচে গেছেন। তবে সামান্য আহত হয়েছেন।

এদিকে দেলোয়ারের লাশ দাফনের পর এই ঘটনাকে ‘হত্যা’ উল্লেখ করে মিল মালিকের বিচার ও হতাহত পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।

মৃত মকসেদ আলীর ছেলে মতিউর রহমান ও মৃত রুস্তম আলীর ছেলে সেলিম হোসেনসহ প্রতিবেশীরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুর্ঘটনার পর মিল মালিক পক্ষ একটিবারও খবর নিতে আসেনি। উপার্জনক্ষম পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে দিশেহারা এই পরিবারগুলো।

এদিকে মিল মালিক সুবল ঘোষ বয়লার বিস্ফোরণের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। শুধু ২১ এপ্রিল মিল চত্বরে তদন্ত কমিটির সামনে সুবলকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।  

রাইসমিলের মালিকের শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

ঘটনাটি তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করেছে। মঙ্গলবার কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতি পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আইনগত সহায়তা চাওয়া হবে বলেও জানান তিনি।