শনিবার বেলা ২টার দিকে চার ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের ‘সাউথ প’ বা দক্ষিণের থাবা নামের এ অভিযান শেষ হয়।
ঘটনাস্থল ত্যাগ করার আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সেখানে প্রেস ব্রিফিংয়ে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহাম্মদ অভিযান শেষ হওয়ার কথা জানান।
বাড়িটিতে ২০টি কেমিক্যাল কন্টেইনার, ছয়টি বোমা, তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট, নয়টি সুইসাইডাল বেল্ট, ১০০ প্যাকেট লোহার বল, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, বোমা তৈরির বৈদ্যুতিক সার্কিট, বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম, জিহাদি বই, পিস্তল, একটি চাপাতি, একটি মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করা হয় বলে জানান দিদার।
ডিআইজি দিদার আহম্মেদ প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও বলেন, যে পরিমাণ বিস্ফোরক ও সার্কিট উদ্ধার করা হয়েছে তা দিয়ে বিপুল সংখ্যক বোমা তৈরি করা যেত।
“এটি নব্য জেএমবির বোমা তৈরির কারখানা। অভিযানের আগে থেকেই পলাতক রয়েছে বাড়ির মালিক আব্দুল্লাহ। সে ও তার স্ত্রী ফাতেমা ওরফে রুবিনা নব্য জেএমবির সদস্য।”
উদ্ধার করা সরঞ্জাম দিয়ে শতাধিক শক্তিশালী বোমা তৈরি করা যাবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান।
অভিযান চলাকালে পাঁচটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। এ সময় আশপাশ এলাকা বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে।
অভিযান চালানোর জন্য পুলিশের পাশাপাশি কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ৩০ সদস্যের একটি দল ঢাকা থেকে ঝিনাইদহ আসে।
শহর থেকে পূর্বদিকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে ঝিনাইদহ-মাগুরা সড়ক থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার ভেতরে বাড়িটির অবস্থান।
বাড়িটি ঘিরে ফেলার পর কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. ছানোয়ার হোসেন বলেছিলেন, “বাড়িতে প্রচুর কেমিক্যাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। কয়েকটা সুইসাইডাল ভেস্ট দেখা যাচ্ছে।বাড়িটিকে নব্য জেএমবির সদস্যরা বোমা তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার করত।”
অভিযান শুরু পর বাড়িটিতে কেউ না নেই এবং সেখানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে বলে ধারণার কথা জানিয়েছিলেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম খান।
প্রতিবেশী চাঁদ আলী ও ইউসুফ আলী জানান, পাঁচ বছর আগে আব্দুল্লাহ সনাতন ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল লতিফের মেয়েকে বিয়ে করেন। আব্দুল্লাহর বাড়িতে কেউ যেত না। মাঝে মধ্যে অচেনা কিছু লোক মোটরসাইকেল নিয়ে আসা যাওয়া করত।
প্রতিবেশী শিরিনা খাতুন বলেন, আব্দুল্লাহর স্ত্রী ফাতেমা ওরফে রুবিনা কারও সাথে কথা বলত না। মুখ সব সময় কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখত।
প্রেসব্রিফিংয়ে খুলনা রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুর রউফ মন্ডল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা, বম্ব ডিস্পোজাল ইউনিটের প্রধানসহ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে অন্তত সাতটি বাড়িতে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর পুলিশ মহাপরিদর্শক শহীদুল হক এ মাসের শুরুতেই বলেছিলেন, এ ধরনের আরও জঙ্গি আস্তানা দেশে রয়েছে।