ইটভাটার ধোঁয়ার কবলে ফসল-গাছপালা

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে গ্রামের মধ্যে গড়ে ওঠা একটি ইটভাটার ধোঁয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকায় বোরো ধানসহ গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আহসান হাবীব নীলু কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2017, 10:12 AM
Updated : 15 April 2017, 10:13 AM

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভাটার চারদিকে আবাদি জমি ও জনবসতি রয়েছে। স্থানীয়দের আপত্তি সত্বেও প্রভাবশালীদের চাপে এই ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। এতে ৩৯ জন জমির মালিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে।

চিলমারীর ইউএনও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ভাটা মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ভাটা মালিক এতে সাড়া দেননি।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার কলেজমোড় থেকে শরীফের হাট সড়কে রমনা ইউনিয়ন সীমানায় বেলের তল এলাকায় ‘হাসান ব্রিকস’ নামের ইটভাটাটি ২০১১ সালে কার্যক্রম শুরু করে। জটিলতার কারণে ২০১২ সালে ভাটার কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। এরপর ২০১৬ সালে যৌথভাবে কার্যক্রম আবার শুরু হয়।

ভাটার কর্মচারী সাজু মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে ভাটাটিতে নতুন করে ইট পোড়ানোর কাজ শুরু হয়। চৈত্রমাসে হঠাৎ শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে গত সপ্তাহে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। এ সময় নিয়মানুযায়ী ইট পোড়ানো বন্ধের পর কমপক্ষে তিন দিন মেশিন চালিয়ে ভাটার অভ্যন্তরের গ্যাস চিমনীর উপর দিয়ে নির্গমনের নিয়ম থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী  মেশিন বন্ধ করে ওই দিন রাতে স্ল্যাব খুলে নিচ দিয়ে ভাটার ভিতরের গ্যাস বের করে দেন। এর ফলে বিষাক্ত গ্যাসের ধোঁয়ায় পার্শ্ববর্তী এলাকার বোরো ধান ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হাসান ব্রিকসের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত পূর্ব মাচাবান্দা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক রাহেদা (৩৪) বলেন, “আমার স্বামী দিনমজুরি করে। ভাটা সংলগ্ন ৩০ ও ৪২ শতকের দুটি জমির ধান দিয়ে আমাদের সংসার চলে। ইতিমধ্যে বোরো ধান আবাদ করতে গিয়ে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ করেছি। আশা করেছিলাম ৬০ মন ধান পাব। এখন আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।”

একই এলাকার মানিক চন্দ্র বর্মণ, মোক্তার মিয়া, মিনু চন্দ্র ও নবিউল ইসলাম জানান, কাদের সদ্য বের হয়ে আসা বোরো ধানের শীষ বিষাক্ত গ্যাসে পোড়া হলুদ রঙ ধারণ করেছে। এছাড়াও বাড়ির বাঁশঝাড়, আম, কাঁঠাল, জলপাইসহ একাধিক গাছের ফল ও ডালপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি অফিসার এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করছেন। ভাটার মালিকদের সাথে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তারা বিভিন্নভাবে তাদের হয়রানি করছে বলে অবিযোগ তাদের।

হাসান ব্রিকসের ম্যানেজার রবি মিয়া বলেন, পাঁচ থেকে ছয় বিঘা জমি লিজ নিয়ে ভাটার কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে যৌথ মালিক পাঁচ জন। এরা হলেন- আজিজ ব্যাপারী, আব্দুল বারী, মনোয়ার হোসেন বাদল, নজরুল ও বদরুল। এছাড়া ব্রিকসের মূল মালিক হাসানের বড় ভাই বোরহান ও লিটন ভাটার কাজ দেখভাল করেন।

ক্ষতিগ্রস্তদের কী করা হবে তা জানেন না বলে তিনি জানান।

ভাটার মালিকপক্ষের লোক বোরহান তাদের কাছে ভাটার বৈধ কাগজপত্র আছে দাবি করলেও কাগজ দেখতে চাইলে অজুহাত দেখিয়ে সটকে পড়েন।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মকবুল হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বিষাক্ত ধোঁয়ায় ধানশীষের ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৩৯। প্রায় চার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে শনাক্ত করা গেছে।

কৃষকদের ক্ষতিপূরণে মালিকপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে বলে জানান তিনি।

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর্জা মুরাদ হাসান বেগ জানান, ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে কৃষি বিভাগ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছে। মালিকপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে।

“অন্যথা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”