খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল সব হতদরিদ্র ‘পাচ্ছে না’

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের অনেকেই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির চাল পাচ্ছে না।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2017, 04:59 PM
Updated : 13 April 2017, 04:59 PM

অন্যদিকে বহিরাগত এক ব্যক্তি ও একটি পরিবারের একাধিক সদস্যের নাম তালিকাভুক্তির অভিযোগও রয়েছে।

এ বিষয়ে তালিকাভুক্ত কয়েকজন জেলা প্রশাসক ও সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পৃথক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

চাল উত্তোলন করতে না পারা কয়েকজন হলেন ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কুঞ্জমহিপুর গ্রামের ডিপটি মিয়ার স্ত্রী আরজিনা বেগম (কার্ড নম্বর ১২২৮), এতরাজ মিয়ার স্ত্রী বিউটি বেগম (কার্ড নম্বর ১২৩৬), দুলা মিয়ার স্ত্রী হাসিনা (কার্ডনম্বর ১২৩৭), আয়েন উদ্দিনের ছেলে আহম্মদ (কার্ড নম্বর ১১০৯) এবং তৈয়ব আলীর স্ত্রী দুলালী (কার্ড নম্বর ১১৩৯)।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের চকনদী গ্রামের সাজু মিয়ার স্ত্রী জরিনা বেগম (কার্ড নম্বর ৬৪), মধু মিয়ার ছেলে আলামিন (কার্ড নম্বর ২০১), কফিল মিয়ার ছেলে হারুন (কার্ড নম্বর ২১৪) এবং রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে জাহেদুল ইসলাম (কার্ড নম্বর ৭৪)।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের রাঘবেন্দ্রপুর গ্রামের সমসের আলীর ছেলে মো. হাছানুর (কার্ড নম্বর ১৯১), আয়ুব আলীর ছেলে রতন মিয়া (কার্ড নম্বর ২৮৩), মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী মোমেনা বেগম (কার্ড নম্বর ২০৫), ওমর ফারুকের স্ত্রী নুরিনা বেগম (কার্ড নম্বর ২৩৬) এবং হরিনাথপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের স্ত্রী রোশনা বেগম (কার্ড নম্বর ২১৫)।  

অভিযোগে বলা হয়, ইউনিয়ন পরিষদ অতি দরিদ্রের তালিকা প্রণয়ণের পর আবার তা সংশ্লিষ্ট উপজেলা কমিটিতে যাচাইবাছাই করে এই ইউনিয়নের এক হাজার ৩০০ সুবিধাভোগীর তালিকা তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে ওই তালিকায় চাকরিজীবী, বহিরাগত, মধ্যবিত্ত গৃহস্থ ও এক ব্যক্তির একাধিকবার নাম থাকার অভিযোগ ওঠে।

চার বিক্রি শুরুর প্রথম থেকেই অনেক সুবিধাভোগী তালিকাভুক্ত থাকলেও এখনও তাদেরকে ইউপি চেয়ারম্যান চাল উত্তোলনের কার্ড দেননি। ফলে তারা কোন চালও উত্তোলন করতে পারেননি। ইতিমধ্যে ২০১৬ সালের অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর, ২০১৭ সালের মার্চ ও এপ্রিল এই পাঁচ মাসের চাল বিতরণ করা হয়েছে, যে সময় তারা পাননি।

হতদরিদ্র কুঞ্জমহিপুর গ্রামের আহম্মদ হোসেন বলেন, “সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খাদ্য শস্য বিতরণের ঘোষনা শুনে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি আমার ভোটার আইডি কার্ড ও দুই কপি ছবি নেন। পরবর্তী ওই রেশন কার্ড বিতরণের সময় চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি বলেন- তোমার নাম দেওয়া হয়নি। পরবর্তী এসো দেখা যাবে।”

কিন্তু পরে গোপন সূত্রে তিনি তালিকায় তার নাম থাকার কথা জানতে পারেন বলে জানান, যার কার্ড নম্বর ১১০৯।

একই গ্রামের জাতীয় পার্টির কর্মী লোকমান হোসেন বলেন, তৈয়ব আলী নামে কুঞ্জমহিপুর গ্রামে কোনো লোক নাই। অথচ তার দুই স্ত্রী দুলালী (কার্ড নম্বর ১১৩৯) ও মোছা. মিনারা বেগমের (কার্ড নম্বর ৫৮৮) নামে দুইটি কার্ড করা হয়েছে। এছাড়া একই পরিবারে স্বামী, স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের নামে তিনটি কার্ড হয়েছে। তারা হলেন মহীপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ (কার্ড নম্বর ১২০৮), তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম (কার্ড নম্বর ১২০১) ও তার ছেলে আবুল কালাম (কার্ড নম্বর ৩৩৯)। চন্ডিপুর গ্রামের শহিদুল মিয়া স্ত্রী আছিয়া বেগমের নামে দেওয়া দুইটি কার্ড ১০৮ ও ১২১ নম্বরের। 

লোকমান আরও বলেন, এই তালিকায় এরকম ভুয়া কার্ডের সংখ্যা প্রচুর। তাদের চালগুলো কোথায় যায়। অথচ অনেক হতদরিদ্র লোক চেয়ারম্যানের কাছে বারবার ধর্ণা দিলেও তাদের নামে কোনো কার্ড দেওয়া হয়নি। 

ইদিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাব্বী আব্দুল্লার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহ্সান হাবীব অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি তদন্ত করতে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোফাখারুল ইসলাম জানান, তদন্ত করার নির্দেশ কপিটি এখনও তার কার্যালয়ে এসে পৌছে নাই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামে ‘খাদ্যবান্ধব’ কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

হতদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবার মার্চ, এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর- এই পাঁচ মাস ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল কিনতে পারবেন। নারী, বিধবা ও প্রতিবন্ধী নারী প্রধান পরিবারকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে এ কর্মসূচিতে।

১০ টাকা কেজি দরের এই চাল কালোবাজারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এই চাল বিতরণে কেউ অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী।

এই চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর ভোক্তা তালিকা প্রণয়ন, ডিলার নিয়োগ ও চাল বিতরণে অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যাচাইয়ে গত বছরের ৯ অক্টোবর আট বিভাগের জন্য আটটি তদন্ত দল গঠন করে করে খাদ্য মন্ত্রণালয়।