জঙ্গি বিপুলের লাশ নেবে না পরিবার

ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা ও তিনজন নিহতের ঘটনায় ফাঁসি হওয়া শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের লাশ গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছেন তার বাবা।

চাঁদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2017, 04:41 PM
Updated : 12 April 2017, 04:52 PM

এছাড়া তিনি লাশ দাফনে অস্বীকৃতি জানানোয় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিপুলের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের মৈশাদী গ্রামে।

মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মানিক বলেন, মঙ্গলবার রাতে বিপুলের বাবা হেমায়েত উল্যাহকে ফাঁসির সিদ্ধান্ত এবং দাফন কার্যক্রমের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানালে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি ছেলে বিপুলের লাশও গ্রহণ করবেন না বলে জানান।

মনিরুজ্জামান বলেন, পরবর্তীতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বিপুলকে পারিবারিক কবরস্থানেই দাফনের সিদ্ধান্তের কথা জানালে হেমায়েত উল্যাহ আবার একই কথা বলেন।

তবে অন্য কেউ দাফন করলে সেটি তাদের বিষয় বলে মন্তব্য করেন হেমায়েত উল্লাহ, বলেন মনিরুজ্জামান।

পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাফন কার্যক্রম শুরু করতে বলা হয় বলে মনিরুজ্জামান জানান।

“এই প্রেক্ষিতে বুধবার রাত ৮টার পর থেকে মৈশাদী গ্রামে বিপুলের পারিবারিক কবরস্থানে তার জন্য কবর খোঁড়ার কার্যক্রম স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় শুরু হয়।”

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর ৪/৫টার মধ্যে বিপুলের লাশ এসে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে। এই লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে।

বিপুলের বাবা হেমায়েত হোসেন পাটওয়ারী সিলেটের ফেন্সুগঞ্জ সার কারখানায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন। বাড়িতে তিনি ও তার স্ত্রী থাকেন। তাদের বিপুলসহ দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান বলেন, “বিপুল সম্পর্কে আমরা খুব বেশি একটা জানি না। কারণ, তিনি দীর্ঘ সময় বাবার চাকরির সুবাদে সিলেটে অবস্থান করেছেন। বিপুল ও তার পরিবারের এলাকায় আসা-যাওয়াও কম ছিল।”

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি ওয়ালী উল্যাহ বলেন, “বিপুলের লাশ কখন চাঁদপুরে পৌঁছবে সে সম্পর্কে আমরা এখনও স্পষ্ট কোনো ধারণা বা নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিপুলের বাবা হেমায়েত উল্যাহ বুধবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, “কারা কর্তৃপক্ষ যখন আমার ছেলের সঙ্গে দেখা করার জন্য বলে, তখন আমি তাদেরকে অপারগতা জানিয়েছি। আমি তার লাশ বাড়িতে আনা ও দাফন করতেও রাজি না। বিষয়টি আমি স্থানীয় প্রশাসনকেও জানিয়েছি।”

বিপুল সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমার ছেলে বিপুল আগে খুব ভালো ছিল। সে মুফতি হান্নানের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে কাছাকাছি অবস্থান করে খারাপ হয়ে যায়। এজন্য মুফতি হান্নানই দায়ী। সে-ই আমার ছেলেকে খারাপ করেছে।”

তিনি জানান, বিপুল সিলেটের এমসি কলেজে বিএ পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এসএসসিতে প্রথম বিভাগ পান; এইচএসসিতেও ভালো ফলাফল করেন। বিএ পড়া শেষে সিলেটের মেয়ে রুমি বেগমের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে বিয়ে করেন। তাদের হুজাইফা (৯) নামের এক ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর একবার শুধু বিপুল চাঁদপুরে এসেছিলেন।

সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন।

এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে। আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন ওই ঘটনায় আহত হন।

ওই ঘটনায় করা মামলার চূড়ান্ত রায়ে আপিল বিভাগ গত বছরের ৭ ডিসেম্বর তিন আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় বহাল রাখে।

এ মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে হাই কোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। আপিল না করায় তাদের ওই সাজাই বহাল থাকে।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। তাদের আবেদন গত ১৯ মার্চ সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে যায়। ফলে চূড়ান্ত বিচারেও ফাঁসির রায় বহাল থাকে।