রায় বহালে খুশি হলেও শঙ্কায় রাজনের পরিবার

সিলেটের আলোচিত শিশু রাজন হত্যায় সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলামসহ চার আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় খুশি তার পরিবার।

মঞ্জুর আহমদ সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2017, 11:27 AM
Updated : 11 April 2017, 11:28 AM

মঙ্গলবার দুপুরে উচ্চ আদালতের রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় রায় দ্রুত কার্যকরে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন রাজনের মা লুবনা বেগম।

রায়ের আগে রাজনের বাড়ি সদর উপজেলার বাদেয়ালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির সবার চোখ টেলিভিশনের দিকে। উচ্চ আদালতে রায়ে কী হয় তা জানতে উদ্বেগও রয়েছে সবার মনে।

উচ্চ আদালতের রায়ে আসামিদের দণ্ড বহাল রয়েছে শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাজনের মা।

ছেলেকে স্মরণ করে তিনি বলেন, “এখন রাজন বেঁচে থাকলে অনেক বড় হয়ে যেত। স্কুলে যেত। ছোট ভাইকে দেখে রাখত।”

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকায় আমরা খুশি। কামরুলসহ সব আসামির রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা নিতে হবে।

“আমার ছেলেকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে ঘাতকরা। তাদের ফাঁসি না হলে রাজনের আত্মা শান্তি পাবে না। আমারাও শান্তি পাব না।”

এক ছেলে রাজনকে হারিয়ে মায়ের শঙ্কা আরেক ছেলে সামিউল আলম সাজনকে নিয়ে। সাজন স্থানীয় অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে।

লুবানা বলেন, “রাজনের খুনিরা প্রভাবশালী হওয়ায় সব সময় ভয় কাজ করে। আমি তাকে স্কুলে নিয়ে যাই। ভয় হয় খুনির পরিবার কখন কী ক্ষতি করে বসে।”

স্কুলে যেতে ভয় হয় শিশু সাজনেরও।

সাজন বলে, “পথে যেতে ভয় পাই। যদি ভাইয়ের মত আমাকে কেউ মেরে ফেলে।”

পরিবারের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কার কথাও জানান লুবনা বেগম।

তিনি বলেন, “রাজনের বাবা গাড়ি চালান। রাত-বিরাতে ঘরে আসেন। শত্রুরা কখন যে কী করে বসে সে নিয়ে চিন্তায় থাকি।”

পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেন লুবনা।

রাজনের বাবা আজিজুর রহমান ঢাকায় আছেন জানিয়ে চাচা সাইদুর রহমান বলেন, “রায় কী হয় তা শুনতেই ঢাকায় গেছেন আজিজুর। সবাই প্রতীক্ষায় ছিল কী রায় হয়। আসামিদের সাজা কমে যায় কি না।

তবে আদালত রায় বহাল রাখায় গ্রামবাসীরাও খুশি বলে জানান তিনি।

২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে ১৩ বছরের শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীদেরই এক সহযোগী নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিলে সারা দেশে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ।

সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর এ মামলার রায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এছাড়া একজনের যাবজ্জীবন এবং পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

এর মধ্যে যাবজ্জীবন সাজার রায় পাওয়া নূর মিয়াই ঘটনার দিন রাজনকে নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করেন এবং পরে ছড়িয়ে দেন ইন্টারনেটে।

বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করে।

হাই কোর্ট তার সাজা কমিয়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে। বাকি আসামিদের সবার সাজা বহাল রাখা হয়েছে।