হাওরে ফসল ডোবার পর সিলেটে চালের বাজার চড়া

বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে সিলেট অঞ্চলের হাওরগুলোর ফসল ডুবে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে সব ধরনের চালের দাম।

মঞ্জুর আহমদ সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2017, 11:48 AM
Updated : 10 April 2017, 11:49 AM

ফসল হারিয়ে হাওরপাড়ে কৃষকের হাহাকারের মধ্যেই চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

সম্প্রতি উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যায় সিলেট জেলার ১৪৫টি হাওরে প্রায় ৫৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় জানিয়েছে।

সোমবার সকালে সিলেট সবচেয়ে বড় চালের পাইকারী বাজার কালিঘাট বাজার ঘুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এ প্রতিনিধি দেখেন, পাইকারি বাজারে বস্তা প্রতি চালের দাম বেড়েছে ২০০-৩০০ টাকা। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজিতে বাড়িয়ে দিয়েছেন ৫-৭ টাকা।

কালিঘাটের পাইকারী ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, “বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে গত সপ্তাহে হঠাৎ বাজারে চালের চাহিদা বেড়ে যায়। চালের আমদানি কম এবং আরও দাম বাড়ার আশঙ্কায় চাহিদা বাড়ায় দামের এই অস্বাভাবিকতা।”

বস্তা প্রতি চালের দাম বেড়েছে ২০০-৩০০ টাকা বেড়েছে বলে জানান তিনি।

রফিকুল বলেন, “সিলেটের বাজারে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, আশুগঞ্জ, দিনাজপুর, নওগাঁ ও নাটোর থেকে চাল আমদানি করা হয়।

“মিল মালিকরা বৃষ্টি আর বন্যার সুযোগে দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে চড়া দামে।’’

কালীঘাট চাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ বলেন, সরকার বাজার থেকে মোটা চাল সংগ্রহ ও মজুদ করায় এবং অতিবৃষ্টিতে বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।

তবে অধিক মুনাফা লাভের আশায় স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চাল মজুদ করেছেন। পাশাপাশি পরিবহন খরচ বাড়ার কারণেও চালের দাম বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

পাইকারী বাজারে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। সব চালের দামই কেজিতে বেড়েছে ৫-৭ টাকা।

লালবাজারের খুচরা বিক্রেতা আবু সুফিয়ান বলেন, পাইকারী বাজারে দামবাড়ায় খুচরা বাজারে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। সব চালের দামই বেড়েছে। ফলে ক্রেতা কমে গেছে।

৪০ টাকা কেজি দরের নিচে সিলেটের বাজারে কোনো চালই পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

লালবাজারে বাজার করতে আসা স্কুল শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, “চালের বাজারে হঠাৎ যেন আগুন লেগে গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়ে গেছে ৮-১০ টাকা। এ অবস্থায় সরকারের বাজার মনিটরিং প্রয়োজন।”

কালিঘাটের ট্রাকচালক মনির মিয়া বলেন, “যে হারে চালের দাম বেড়েছে ভাত খাওয়াই দায় হয়ে পড়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় সারাদিন খেটে যা রোজগার হয় সব টাকাই চলে যায় চাল কিনতে।

“শুধু চাল কিনলে তো হবে না সাথে অন্য সদাইওতো কিনতে হয়। সরকার চালের দাম না কমালে না খেয়ে মরতে হবে।’’

নগরীর কালীঘাট পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, মালা আতব চালের ৫০ কেজির বস্তা দুই হাজার ৩০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মালা সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ২৫০ টাকায়।

আর মুক্তাশাইল দুই হাজার টাকা, খুলনা বেতী চাল দুই হাজার ৫০ টাকা, ভারতীয় পরিমল দুই হাজার ১০০ টাকা, মিনিকেট সিদ্ধ দুই হাজার ২০০ টাকা, জিরা সিদ্ধ দুই হাজার ৫০০ টাকা, স্বর্ণ আতব দুই হাজার টাকা, নাজির শাইল দুই হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারের সবচেয়ে কম দামের লালী চাল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৯০০ টাকায়।

চাল ব্যবসায়ী সম্পদ চন্দ্র দে জানান, বর্তমানে কৃষকের ঘরে ধান নেই। মিল মালিকরা ধান পাচ্ছেন না, যার কারণে ধানের সংকট রয়েছে।

“এছাড়া বর্ষা মৌসুমে বেশিরভাগ চাতাল বন্ধ থাকে। তাই নতুন ধান না ওঠা পর্যন্ত চালের বাজার এরকমই থাকবে।”

চালের দাম বাড়ার খবরে সোমবার দুপুরে নগরীর বিভিন্ন বাজারে পরিদর্শন করেছে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল।

জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বলেন, চাল মজুদ করে ও বন্যা ও বৃষ্টিকে পুঁজি করে চালের দাম বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলাতে ইউএনওরাও বাজার তদারকি করছেন। আশা করছি চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।”