কৃষকদের ভাষ্য, ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বোরো চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফসল আবাদে ঝুঁকছেন তারা।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বোরো চাষের কারণে রংপুর অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সরকারি সিদ্ধান্তে বোরো চাষের পরিবর্তে পানি সাশ্রয়ী ফসল আলু ও ভুট্টা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ কারণে বোরো চাষ কমে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আলম জানান, প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ কমছে। এর ফলে গত দুই বছরে ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ কমে যাওয়ায় ৮২ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন কমে গেছে।
বাকি এক একর জমিত কার্ডিনাল জাতের আলু আবাদ করেছিলেন বলে জানিয়ে কৃষক আতিয়ার বলেন, “আলু পাচি ১৪০ বস্তা। প্রতি বস্তা (৮৪ কেজি) আলু ৮০০ টাকা দরে ব্যাচেয়া পাইচি এক লাখ ১২ হাজার টাকা। জমি তৈয়ার, বীজ, সার, সেচ খরচ ও আলু তোলা পর্যন্ত এক একর জমিত খরচ হইচে ৮০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়া ৩২ হাজার টাকা বেশি পাইচি।”
“এক একর জমিত ভুট্টা আবাদ করছি। আশা করচি ফলন ভালো হইবে।”
পীরগাছার কলাবাড়ি গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, “বোরো ধানের ফলন ভালো হয়; কিন্তু সে ধান বিক্রি করতে গেলে উৎপাদন খরচ ওঠে না। দুই বছর ধরে এক মণ ধান বিক্রি করে একজন শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করা যায় না।
“ধান আবাদ করে যদি উৎপাদন খরচ না ওঠে, লোকসান গুণতে হয় তাহলে সে ফসল আবাদ করে লাভ কী? এবছর আমার ছয় একর জমির মধ্যে চার একর জমিতেই বোরো আবাদ না করে ভূট্টা চাষ করেছি।”
গত বছর এক একর জমিতে ভুট্টা ২০ হাজার ৬০০ টাকা লাভ হয়েছিল বলে জানান কৃষক মতিয়ার।
“ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বোরো চাষের পরিবর্তে পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। ”
গত তিন বছরে রংপুর অঞ্চলে ভুট্টা, আলু ও গম চাষ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কম খরচে এসব ফসল দ্বিগুণ উৎপাদন হচ্ছে এবং ভালো দামও পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক, বলেন শাহ আলম।
রংপুর জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল বলেন, বোরো চাষে ফলন ভালো হয়; কিন্তু ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা বোরো চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
“গেল দুই মৌসুমে বোরো ধানের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কৃষকরা রাস্তায় ধান ফেলে বিক্ষোভ করেছে।”
ক্রমাগত বোরো চাষ কমতে থাকলে খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানান আব্দুল জলিল।
তবে ওই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, “বোরো চাষ কমে যাওয়ার কারণে উৎপাদন কমে যাচ্ছে ঠিকই। তবে রংপুর অঞ্চলে এখনও চাহিদার তুলনায় বেশি বোরো ধান উৎপাদন হচ্ছে। ”