তবে অন্য পুরুষের লাশটি কার, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার ওসি খায়রুল ফজল।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পুলিশ ঘিরে ফেলার পর শনিবার শিববাড়ি এলাকার পাঁচ তলা ওই বাড়িতে অভিযান চালায় সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল।
সোমবার সন্ধ্যায় সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান, ভেতরে চার জঙ্গির লাশ পেয়েছেন তারা, এর মধ্যে দুটি লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক নারী ও এক পুরুষের লাশ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
উস্তার আলী নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ওই বাড়িটির নিচতলার একটি ফ্ল্যাট মর্জিনা বেগম ও কাউছার আলী নামে এক দম্পতি ভাড়া নিয়েছিলেন।
এই দম্পতির ফ্ল্যাটটিই জঙ্গি আস্তানা বলে পুলিশের সন্দেহ করে অভিযান শুরু করেছিল।
নিহত চারজনের মধ্যে নারী একজন বলে একটি লাশ মর্জিনার বলেই মনে করা হচ্ছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ওসি খায়রুল।
অন্য লাশটি কাউছারের কি না-জনতে চাইলে তিনি বলেন, তা এখনই নিশ্চিত করতে পারছেন না তারা।
ওই বাড়ির নিচ তলায় পাওয়া লাশগুলোর শরীরও বিকৃত বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান। সেনা কর্মকর্তা ফখরুল আগেই বলেছিলেন, গুলি করার পর এক জঙ্গি তার দেহে বাঁধা বিস্ফোরক ফাটিয়ে দিয়েছিলেন।
লাশ দুটি থেকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত করা হবে বলে ওসি জানান।
বাড়িওয়ালা উস্তার আলীর তথ্যানুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি রেখেই তিনি তিন মাস আগে মর্জিনা ও কাউছারকে ওই বাসা ভাড়া দিয়েছিলেন।
অভিযান শুরুর পর শুক্রবার বেলা ১২টার পর নাম উল্লেখ করে পুলিশের হ্যান্ড মাইকে বলা হয়েছিল, “মর্জিনা বেগম, আপনাদের চারদিক দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করুন।”
দফায় দফায় এভাবে আহ্বান জানানোর মধ্যে শাহ আলম নামে পুলিশের একজন এসআই সন্দেহভাজন জঙ্গিদের উদ্দেশে মাইকে বলেন, “আপনারা মুসলমান, আমরাও মুসলমান। আপনাদের কোনো বক্তব্য থাকলে মিডিয়ার ভাইয়েরা আছেন, আপনারা কথা বলুন।”
এ সময় ওই বাড়ি থেকে জানালা ফাঁক করে নারী কণ্ঠের জবাব আসে, “আপনারা শয়তানের পথে, আমরা আল্লাহর পথে।”
এর পরপরই আরেক পুরুষকণ্ঠে পুলিশের উদ্দেশে বলা হয়, “দেরি করছ কেন? আমাদের সময় কম। তাড়াতাড়ি সোয়াট পাঠাও।”
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পর রাতে সোয়াটও গিয়েছিল সেখানে। পরে অভিযানের দায়িত্ব আসে সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডো ব্যাটালিয়নের উপর।
প্রথম দিনের অভিযানে ভবনটিতে আটকে পড়া ৭৮ জনকে উদ্ধারের পর দ্বিতীয় দিন দুই জঙ্গির নিহত হওয়ার খবর জানায় সেনাবাহিনী।
তৃতীয় দিন সোমবার ভবনটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভেতরে চারটি লাশ পাওয়ার কথা জানানো হয়।
নিহত অন্য দুজনের দেহে সুইসাইড ভেস্ট লাগানো রয়েছে জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার ফখরুল বলেন, “যে অবস্থায় আছে, তাদেরকে ওইখান থেকে বের করাটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এই ডেডবডিগুলো কীভাবে বের করব, সেজন্য আমরা পরিকল্পনা করছি।”
ওই ভবনজুড়ে জঙ্গিরা প্রচুর বিস্ফোরক স্থাপন করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শেষ হলে পুলিশের হাতে ভবনটির দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে।