আতিয়া মহল নামে বাড়িটি ঘিরে অভিযানের কারণে পাঠানপাড়াসহ আশপাশের বন্দরঘাট, চান্দাই, জৈনপুর, কিসোনপুর এলাকার বাড়িগুলোর সব বাসিন্দাদেরই পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
বাজার বন্ধ, গ্যাস সংযোগ নেই, তার সঙ্গে আতঙ্ক- এই অবস্থায় অনেকে কাছে-ধারের এলাকায় আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন।
তবে অভিযান পরিচালনাকারী সেনাবাহিনী সোমবার ওই জঙ্গি আস্তানার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এই এলাকার মানুষগুলো আবার তাদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনে ফেরার আশা করছেন।
সোমবার সন্ধ্যার ব্রিফিংয়ে সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল আহসান আতিয়া মহল থাকা চার জঙ্গির নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়ে অভিযান শেষের দিকে বলে ইঙ্গিত দেন।
তার সঙ্গে থাকা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রুকন উদ্দিনও বলেন, “যে কাজ করছি পাবলিকের নিরাপত্তার স্বার্থে করেছি। অপারেশনের যেহেতু শেষ পর্যায়ে আছে, তাই আগামীকালই সেই ভালো খবর দিতে পারি।”
শিববাড়ির ব্যবসায়ী বন্দরঘাটের বাসিন্দা আফজাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আতঙ্ক কেটেছে বলে মনে হচ্ছে। এখন সব কিছু স্বাভাবিক হলেই ভালো।”
এই কয়েক দিনে আতঙ্কে দিন যাপনের কথা ফুটে ওঠে বন্দরঘাটের একটি বাড়ির ভাড়াটিয়া সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের বাসিন্দা মো. নুরু মিয়ার কথায়।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দিনে রাস্তার ধারে এসে বসে থাকি। রাত কাটাই ভয়ে আতঙ্কে।
“আমরা তো এখানে আটকা পড়েছি। বাড়িত যাইতা হইলেও ১০০০-১৫০০ টাকা দরকার। সেইডা কই পামু। তাই রইয়া গেলাম আতঙ্কের মাঝোই।”
ইচ্ছার কথা জানতে চাইলে নুরু মিয়া বলেন, রাতে যেন ঘুমাতে পারি, দিনে যেন কাজে যেতে পারি, দেশ যেন ভালো থাকে, সকলে যেন ভালো থাকে।
একই এলাকার আরেক ভাড়াটিয়া সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার দীপক পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুব কষ্টে দিন কাটছে। বউ-পোলাপান নিয়া ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটিয়েছি। রাতে ঘুমাতে পারিনি।
“বাচ্চাদের শোয়ালে আবার উঠে যেত। ওদেরকে নিয়ে বসে থাকতে হত। মহিলারাও কান্দাকাটি করে। ঘরের চালে কিছু পড়লেও মনে হয়, কী জানি কী হইছে।”
“যা রুজি কামাই ছিল, সব শেষ। এখন কাজে যাইতা পাইলেই হয়,” বলেন দীপক।
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শিববাড়ির বন্দরঘাটের সোনারগাঁও আবাসিক এলাকার মোহাম্মদ নয়ন জানালো শনিবার থেকে তার স্কুল বন্ধ, স্কুলে এবার স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানও হয়নি। অভিযান এলাকা পেরিয়ে পাশের এলাকায় থাকেন তার প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষসহ অনেক শিক্ষক। অভিযানের কারণে তারা না আসায় ক্লাস চলছে না।
অন্য এলাকা থেকে এসে শিববাড়িতে আটকাও পড়েছেন কেউ কেউ; সঙ্কট নিরসনের পর বাড়ি ফেরার আশায় আছেন তারা।
তেমনেই একজন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের বাসিন্দা ট্রাকচালক রবীন্দ্র মালাকার। ট্রাকে কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় শিববাড়ির একটি ওয়ার্কশপে ঠিক করতে দিয়েছিলেন।
শুক্রবার রাতে সেটা সারানোও হয়েছে। শনিবার সকালে সেটা নিয়েও আসতে চেয়েছিলেন। তবে এরপর আর আনা হয়নি। অভিযান শেষের ইঙ্গিত মেলার পর তার আশা, দ্রুত তিনি ট্রাক নিয়ে ফিরতে পারবেন কাজে।
রাজমিস্ত্রী ফজলু মিয়া এই এলাকায় বন্দরঘাট এলাকায় একটি বাড়িতে কাজের ঠিকাদারি নিয়েছেন। তবে মাল ঢোকাতে না পারায় তিন দিন ঘরে তার কাজ বন্ধ।
তিনিও প্রতীক্ষা করছেন, সামনের সড়কটি খুলে দেওয়া হলে তিনি কাজে ফিরতে পারবেন।