‘নিচেই জঙ্গি আস্তানা জানার পর আরও আতঙ্কে ছিলাম’

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে দুটি ভবনে ৩০ ঘণ্টার বেশি জিম্মিদশায় থাকা অর্ধশতাধিক মানুষ বের হয়ে আসার পর জানিয়েছেন তাদের আতঙ্ক থেকে মুক্তির কথা।

সিলেট প্রতিনিধিমঞ্জুর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2017, 02:08 PM
Updated : 25 March 2017, 04:34 PM

শনিবার সকাল ৯টায় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরুর পর ওই জঙ্গি আস্তানায় জিম্মি হয়ে পড়া ৭৮ জনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে সেনাবাহিনী; তবে এখনও শেষ হয়নি অভিযান।

চারতলা ও পাঁচতলা দুই ভবন থেকে উদ্ধার ৭৮ জনের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন নারী ও ২১টি শিশু রয়েছে।

তাদের উদ্ধারের পর পাশের একটি ভবনে দিনভর নিরাপদে রাখার পর সন্ধ্যায় তাদের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা বলার সুযোগ করে দেয় সেনাবাহিনী।

এদের মধ্যে শাহানা আক্তার নামে এক ব্যাংকারের সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হয়।

পাঁচতলা ভবনটির দ্বিতীয় তলায় থাকা শাহানাদের এক তলা নিচেই জঙ্গি আস্তানা, যার কারণে অন্যদের থেকে বেশিই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন বলছেন এই ব্যাংকার।

তিনি বলেন, “শুক্রবার ভোররাতে বিকট শব্দে ঘুম ভাঙার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। পরে হ্যান্ড মাইকে পুলিশ ভবনে জঙ্গি আস্তানা জানিয়ে সবাইকে নিরাপদে থাকতে নির্দেশনা দেয়। নিচেই জঙ্গি আস্তানা জানার পর আরও আতঙ্কে ছিলাম।”

জঙ্গি আস্তানাটি ঘিরে রাখার পর ওই দুই ভবন ও আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় আতঙ্কের মধ্যে ৩০ ঘণ্টার বেশি অবরুদ্ধ থাকার পর শনিবার সেনা অভিযানে উদ্ধার হয়ে ‘নতুন জীবন’ পেয়েছেন বলে মনে করছেন শাহানা।

একই মালিকের ওই দুই ভবনে একটির নিচ তলায় এক জঙ্গি দম্পতি রয়েছে, ধারণা থেকে বৃহস্পতিবার ভোররাতে প্রথম অভিযান শুরু করে পুলিশ। এরপর যায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এবং সোয়াট; সবশেষে অভিযানের নেতৃত্ব নেয় সেনাবাহিনী।

সোয়াট শুরুতে এই অভিযানের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন স্প্রিং রেইন’। কিন্তু সেনাবাহিনী নেতৃত্ব নেওয়ার পর অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’।

ওই দুই বাড়ির মধ্যে পাঁচতলা ভবনটিতে ৩০টি ফ্ল্যাটে সমান সংখ্যক পরিবারের বসবাস। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মধ্যে বাকি পরিবারগুলো হয়ে পড়েছিল কার্যত জিম্মি।

পাঁচতলা ভবনটির তৃতীয় তলায় বসবাস করা উজ্জ্বল চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুক্রবার সকালে হঠাৎ বোমার বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে, জানতে পারি ভবনে জঙ্গি রয়েছে। দুই দিন অবরুদ্ধ ছিলাম, বিদ্যুৎ-গ্যাস ছিল না।”

সেনা অপারেশন শুরুর সাড়ে নয় ঘণ্টা পর শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এক ব্রিফিংয়ে সেনা মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফখরুল আহসান জানান।

দিনভর অভিযানে মুর্হূমুহু গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সন্ধ্যায় একজন নিহত ও সেনা সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

এর আগে জঙ্গিবিরোধী কোনো অভিযানে এত দীর্ঘ সময় লাগেনি।