বিচার নিয়ে সংশয়ে তনুর বাবা

এক বছর পেরিয়ে গেলেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর খুনি শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2017, 08:42 AM
Updated : 20 March 2017, 08:53 AM

খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবিতে সোমবার কলেজে মানববন্ধন করেছেন তার সহপাঠীরা। কুমিল্লা গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে পুলিশকে দেওয়া হয়েছে স্মারকলিপি।

এক বছরেও তদন্তের অগ্রগতি না হওয়ায় বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তনুর বাবা কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী ইয়ার আহম্মেদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখন আর আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কেউ যোগাযোগ করছে না। আমরা সঠিক বিচার পাব কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছি। সারাদেশে এ নিয়ে কত আন্দোলন-সংগ্রাম হলো, কিন্তু ক্ষমতাশালী অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেল।”

গত বছরের ২০ মার্চ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে নিজেদের বাসা থেকে আরেক বাসায় ছাত্র পড়াতে গিয়ে খুন হন ১৯ বছর বয়সী তনু। একটি ঝোপের ভেতর থেকে তার লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে তাদের সন্দেহ।

সেনানিবাসে কলেজছাত্রীর লাশ পাওয়ার পর তা নিয়ে সারাদেশে ক্ষোভের ঝড় বয়ে যায়। কিন্তু ময়নাতদন্তের পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা বলেন, তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণের কোনো প্রমাণ তারা পাননি।

অথচ ডিএনএ পরীক্ষার পর সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, খুনিরা তনুকে ধর্ষণও করেছিল; তার নমুনা তারা ডিএনএ পরীক্ষায় পেয়েছেন।

আলোচিত এই খুনের প্রথম ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর আদালতের নির্দেশে গতবছর ৩০ মার্চ দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা। ওই প্রতিবেদনে ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ হওয়ার কথা বলা হয়। তবে তা ধর্ষণ কি না সে বিষয়টি এড়িয়ে যান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহা, যার নেতৃত্বে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়।

এরই মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম অসুস্থতার কথা বলে এ মামলার তদন্ত থেকে অব্যাহতি নেন। তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নাজমুল করিম খানকেও গতবছর জুলাইয়ে রাজশাহীতে বদলি করা হয়।

তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে সেনাবাহিনীর মহড়া হয়। এ কারণে তারা ওই সময় সন্দেহভাজনদের নিয়ে কাজ করতে পারেননি।

“ফেব্রুয়ারিতে কিছু কাজ করেছি। তনুর লাশের পাশে পড়ে থাকা স্যান্ডেল, কলম, মোবাইল ফোন ও ব্যাগসহ কয়েকটি জিনিসের ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। প্রতিবেদন পেলে আরও বেশি কাজ করা যাবে।”

কুমিল্লা গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হানসহ অন্যরা সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে দ্রুত খুনি শনাক্ত করার দাবি জানান।

খায়রুল পরে সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ২ এপ্রিল তারা কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন। তদন্তের কোনো অগ্রগতি না হলে ওই সংবাদ সম্মেলনে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা আসবে।