চাঁদপুরে মাদ্রাসা শিক্ষকের বেতন বন্ধ ৮ মাস

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় একটি মাদ্রাসার এক শিক্ষকের বেতন আট মাস ধরে আটকে রেখেছে ব্যবস্থাপনা কমিটি।

আল ইমরান শোভন চাঁদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2017, 11:37 AM
Updated : 3 March 2017, 11:54 AM

ভুক্তভোগী মাহমুদুল হাসান গন্ডামারা এ বি এস ফাযিল মাদ্রাসার আরবির প্রভাষক।

মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর গন্ডামারা এ বি এস ফাযিল মাদ্রাসায় আরবি শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেই মোতাবেক নয় জন প্রার্থী আবেদন করেন। গত বছরের ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় মাহমুদুল হাসান প্রথম স্থান অধিকার করেন। ওই বছরের ১ জুলাই মাহমুদুল হাসান এমপিওভুক্ত হন।

কিন্তু এ নিয়োগ নিয়ে একটি মামলার কথা তুলে ব্যবস্থাপনা কমিটি গত আট মাস ধরে এ শিক্ষকের বেতন বন্ধ রেখেছে, যদিও আদালত বেতন বন্ধ রাখার কোনো আদেশ দেয়নি।  

মাদ্রাসাটির অধ্যক্স মুহাম্মাদ আবদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিক্ষক মাহমুদুল হাসান দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি এমপিওভুক্তির পর থেকেই ব্যাংকে নিয়মিত বেতন জমা হচ্ছে।

“কিন্তু মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষক মাহমুদুল বেতন উত্তোলন করতে পারছেন না।”

আবদুর রহমান জানান, মাহমুদুলের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে চাঁদপুর আদালতে গত বছরের ৬ জুন মাসে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থী মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় মাহমুদুলের বিরুদ্ধে আগের চাকরির বিষয়ে তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে মাদ্রাসায় তার নিয়োগ বাতিলের আবেদন করা হয়।

মাহমুদুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি নিয়ম মোতাবেক গন্ডামারা এ বি এস ফাযিল মাদ্রাসায় আরবি প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছি। নিয়োগ কমিটি যখনই আমার কাছে আগের কর্মস্থলের ছাড়পত্র চেয়েছে তখনই আমি তা জমা দিয়েছি। এতে আমার কোনো ত্রুটি ছিল না এবং আমি বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসকে অবহিত করি।”

তার অভিযোগ, “আমি যখন মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি, তখন আরও কয়েকজন প্রার্থী ছিলেন। ওইসব প্রার্থীদের সাথে মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির কারও আর্থিক লেনদেনের চুক্তি ছিল। চুক্তি অনুযায়ী তাদের নিয়োগ দিতে না পেরে আমার বেতন ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হয়েছে।”

তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানান।

মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি ও শিক্ষক নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক শাহজাহান পাটওয়ারী বলেন, “যেহেতু আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সেই প্রেক্ষিতে আমরা শিক্ষক মাহমুদুল হাসানের বেতন উত্তোলন বন্ধ রেখেছি। আদালত থেকে তার বেতন বন্ধ রাখার জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার বেতন উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নীতিমালায় কী বলা হয়েছে তা আমার কাছে মুখ্য বিষয় নয়। মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটি যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা-ই চূড়ান্ত।

মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হারুনুর রশিদ পাটওয়ারী বলেন, আদালতে শিক্ষক মাহমুদুল হাসানের বিষয়টি নিষ্পত্তি শেষে তার বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করা হবে।

“আমাদের বিরুদ্ধে আর্থিক যেই অভিযোগ করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।”

জেলা শিক্ষা অফিসার আবু সালেক বলেন, শিক্ষক মাহমুদুল হাসানকে মাদ্রাসায় যোগদানের জন্য গত বছরের ২৬ এপ্রিল ‘ভূতাপেক্ষিক’ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটি কেন ওই শিক্ষকের বেতন উত্তোলন করতে দিচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়।

“যেহেতু আদালত থেকে বেতন বন্ধের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, সেহেতু মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটি এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আমি বিষয়টি নিয়ে হাইমচর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কথা বলব এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।”

হাইমচর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুর রহমান বলেন, মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটি এভাবে শিক্ষক মাহমুদুল হাসানের বেতন উত্তোলন বন্ধ রাখতে পারেন না। যেহেতু সরকার থেকে ওই শিক্ষকের জন্য প্রতিমাসে বেতন পাঠানো হচ্ছে, সেহেতু তার বেতন বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। এটি অন্যায়ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

মাহমুদুল হাসানকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বেতন উত্তোলনের জন্য আবেদন করতে বলেন জাহিদুর।