শেরপুরে মরিচের ফলন ভাল, ‘দামে পোষাচ্ছে না’

শেরপুরের চরাঞ্চলে এ বছর মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাকা মরিচ তুলে রোদে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। তবে দামে তারা খুশি না। ভারত থেকে মরিচ আমদানিকে দায়ী করেছেন কেউ কেউ।

শেরপুর প্রতিনিধিমো. আব্দুর রহিম বাদল, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2017, 10:20 AM
Updated : 3 March 2017, 10:53 AM

সদর উপজেলার কামারের চর, চরপক্ষীমারী, বেতমারী-ঘুঘুরাকান্দি, চরমোচারিয়া ও বলাইর চর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে চাষীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে।

এবার ৫০ শতাংশ জমিতে মরিচ আবাদ করেছেন চরভাবনা গ্রামের ইব্রাহিম মিয়া।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফলন ভাল হইছে। মরিচ অহনও বিক্রি করি নাই। রোদে শুকাইতাছি। বর্তমানে শুকনা মরিচে সাড়ে ৪ হাজার টাকা হইতে ৫ হাজার টাকা আছে। দাম বাড়বে বলে আশা করছি।”

একই গ্রামের চাষী সাইফুল ইসলামও এখনও বিক্রি করেননি।

তিনি বলেন, “আল্লাহর রহমতে মরিচের ফলন বালাই অইছে। মনে করেন যে মরিচ অহন ক্ষেত থনে তুইল্লা শুকাইতাছি। দাম যহন বাড়ব তহন বিক্রি করমু।”

কামারের চরের মরিচ চাষী শাহাবুদ্দিন ইতোমধ্যেই ৩০ মণ মরিচ তুলেছেন। এখনও বিক্রি করেননি।

তিনি বলেন, “খুব সুন্দর মইছ অইছে। অহনও বেচি নাই। শুকাইতাছি।”

এক একর জমিতে মরিচ চাষ করে ৫ মণ ৫ হাজার টাকা করে বেচেছেন বলে জানালেন একই গ্রামের চাষী  শরিফুল ইসলাম।

তবে এই দাম যথেষ্ট নয় বলে তিনি মনে করেন। কারণ ব্যাখ্যা না করে বলেন, “এই দামে মরিচ বিক্রি কইরা আমাদের পোষায় না। প্রতিমণ মরিচ কমপক্ষে ৭ হাজার টাকা হইলে পোষাব।”

দশআনী গ্রামের চাষী লাল মিয়া মরিচের দাম কমের কারণ হিসেবে ভারত থেকে আমদানিকে দায়ী করলেন।

তিনি বলেন, “ফলন ভালই অইছে। তয় কামলা খাডাইয়া, অন্য সব খরচ দিয়া মরিচ বেইচ্চা পোষাইতাছে না। ভারতের মরিচ আমদানির কারণে আমরা মরিচের দাম কম পাইতাছি।”

মরিচের মৌসুমে কাজ বাড়ে ক্ষেতমজুরদেরও। কিন্তু দৈনিক দেড় শ টাকা মজুরিতে তাদের পোষায় না বলে অনুযোগ।

চরভাবনা গ্রামের ক্ষেতমজুর রহিমা খাতুন বলেন, “সকাল ৮টার সুম আহি আর বিকাল ৫টার সুম যাই। দেড় শ টেহা ময়না দেয়। সারাদিন মরিচ তুলি। আমরা ভূমিহীন মানুষ। মাইনষের জমিত পইড়া থাহি। এ ময়না দিয়া কোনোবায় চলি।”

ফেলি বেগমেরও একই অনুযোগ, “দেড় শ টেহা ময়না দেয়। খাওয়া-টাওয়া কিছু দেয় না। কী করমু। আমার সংসারে অভাব। তাই রোইদের মধ্যেই কাম করতাছি।”

কোথাও কোথাও শিশুদেরও দেখা গেছে মরিচের ক্ষেতে শ্রম বেচার কাজে।

কামারের চর দাখিল মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির নাজমা আক্তার তাদেরই একজন।

“ক্লাস বন্ধ। তাই মার লগে মরিচ তুলতে আইছি। মজুরি ১৫০ টেহা। এই টেহা পড়াশোনার কাজে লাগাইতাছি।”

মুন্সিবাড়ীর উম্মে হাবিবা মাদ্রাসার হাবিজা আক্তার বলছে, “ক্লাস নাই। তাই কাজ করি।”

মরিচ নিয়ে ব্যস্ত হয়েছেন জেলার মৌসুমি ফড়িয়া-ব্যাপারিসহ অন্যান্য মধ্যবর্তী কারবারিরাও। সাহাব্দীর চরের সাহেব আলী পাকা মরিচ কিনে শুকিয়ে বিক্রি করেন।

তিনি বলেন, “পাকা মরিচ ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা মুণ কিনি। মোমেনসিং নিয়া শুকাইয়া প্রতি মুণ বেচি ৪৫০০ থেকে ৪৮০০ টাকা। এতে মুণপ্রতি লাভ থায়ে ২০০-৩০০ টেহা।”

এ বছর মরিচের ফলন ভাল হওয়ায় আগামী বছরের জন্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বছর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে। আগামী বছরের জন্য এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ হাজার ২৩০ হেক্টর।”