সোমবার কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে গেলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তারা তাদের এই ইচ্ছার কথা জানান।
প্রায় ১৭ মাস আগে ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর সকালে ওই গ্রামে নিজের ঘাসের খামারে যাওয়ার পথে গুলিতে মারা যান ৬৬ বছরের কুনিও।
এ ঘটনায় জেএমবির রংপুর আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানাসহ আটক পাঁচ সদস্য হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
জাপানে কৃষি গবেষণা ব্যয়বহুল হওয়ায় রংপুরে এসে গবেষণার কাজ করছিলেন কুনিও, জানিয়েছেন রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়ার এ কে এম জাকারিয়া বালা, যার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন কুনিও।
আর তিনি যার জমি লিজ নিয়ে গবেষণার জন্য ঘাসের খামার করেছিলেন, সেই শাহ আলম বলেন, কুনিওর ঘাসের সেই খামারটি এখন আর নেই। কিন্তু সেখানে গেলে কুনিও ও তার খামারের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
মৃত্যুর চার মাস আগে কুনিও দুই একর জমি ইজারা নিয়ে জাপানি কয়েল ঘাষের খামার বানিয়েছিলেন বলে জানান শাহ আলম।
তিনি বলেন, “কুনিওকে নিপাট ভদ্রলোক বলেই জানে এ গ্রামের মানুষ। তিনি মাত্র চার মাসেই এলাকার মানুষকে আপন করে নিয়েছিলেন। আর তিনি খুব মিশুক ছিলেন।
“খামারে আসার পর আশপাশের লোকজনের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলতেন কুনিও। সবার সঙ্গে কথা বলতেন। আমার সঙ্গে দেখা হলে আগেই সালাম দিতেন। এমন লোকের শত্রু থাকতে পারে, আজও বিশ্বাস হয় না। তাকে যারা হত্যা করেছে তাদের যেন ফাঁসি হয়।”
ওই গ্রামের স্কুলশিক্ষক মোত্তালেব হোসেন বলেন, “কুনিও প্রায় প্রতিদিনই খামারে আসতেন। ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলতেন। বেশ হাসিখুশি মানুষ ছিলেন তিনি। কারও সাথে দেখা হলে সালাম দিতেন। কেউ সালাম দিলে তার জবাবও দিতেন তিনি।”
কুনিও সাধারণত মোন্নাফ আলীর রিকশায় করে খামারে যেতেন।
মোন্নাফকে কুনিওর কথা জিজ্ঞেস করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি বলেন, “রংপুর শহর থেকে তাকে প্রতিদিন সকালে রিকশায় করে খামারে নিয়ে যেতাম। আমার পরিবারের খোঁজখবর নিতেন।
“নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা দিতেন। মাঝেমধ্যে আমার ছেলেমেয়ের জন্য নাশতা কিনে দিতেন কুনিও। ঘাস বিক্রি করে আমাকে একটা নলকূপ কিনে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।”
এই মোন্নাফের চোখের সামনেই কুনিওকে গুলি করা হয়।
“আমার চোখের সামনেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হল। আমি তাকে রক্ষা করতে পারি নাই। আমি যা দেখেছি আদালতে তাই বলেছি। খুনিদের ফাঁসি হলে সবচেয়ে বেশি খুশি হব।”
তিনি বলেন, “মাঝেমধ্যে আমার দোকানে বসে চা-রুটি খেতেন কুনিও। তার কোনো অহংকার ছিল না। সব সময় হেসে হেসে কথা বলতেন।”
সারাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, “কুনিও হত্যার পর থেকে আমরা এলাকাবাসী তার খুনিদের ফাঁসি দাবি করে আসছি। খুনিরা সর্বোচ্চ সাজা পেলে কুনিওর আত্মা শান্তি পাবে। আমরাও খুশি হব।”
মৃত্যুর আড়াই মাস আগে ১৫ জুলাই কুনিও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া নাম নিয়েছিলেন বলে তার পরিচিতরা জানিয়েছেন।
জাপান দূতাবাসের অনুরোধে ১২ অক্টোবর গভীর রাতে রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়া কবরস্থানে কুনিওকে দাফন করে স্থানীয় প্রশাসন। কবরস্থানের লাশ দাফনের নিবন্ধন খাতায় তার নাম গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লেখা হয়েছে।