এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের অভিযোগ

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় এক ব্যবসায়ীকে প্রচণ্ড মারধরের অভিযোগ উঠেছে লালমোহন থানার এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে।

আহাদ চৌধুরী তুহিন ভোলা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2017, 09:31 AM
Updated : 25 Feb 2017, 10:33 AM

নির্যাতনে আহত মোহাম্মদ আলীকে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাকে ঢাকা পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।

মোহাম্মদ আলী চরফ্যাশনের ওমরপুর ইউনিয়নের চৌমুহনী আল-আমিন বাজারের বাসিন্দা। তিনি স্থানীয়ভাবে একটি কোম্পানির পণ্য বাজারজাত করার ব্যবসায়ে জড়িত।

এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী লালমোহন থানার এসআই আবদুল হাইয়ের শাস্তি দাবি করেছেন।

সরেজমিনে এলাকাবাসী ও মোহাম্মদ আলীর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন জানা যায়, গত ১২ জানুয়ারি মোহাম্মদ আলীর বসত ঘরে হামলা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১৪ জানুয়ারি মোহাম্মদ আলী তার বোন ফুলভানু, ভগ্নিপতি মো. সাহাজান ওরফে সাজাহান দুবাইসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে চরফ্যাশন থানায় মামলা করেন।  

পরদিন (১৫ জানুয়ারি) বোন ফুলভানু বাদী হয়ে মোহাম্মদ আলীসহ পাঁচ জনের নামে থানায় মামলা করেন বলে জানান মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী শামিমা নাসরিন।  

বিষয়টি পারিবারিক বলে চরফ্যাশন থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে শামিমা জানান।

তিনি বলেন, এর একমাস পর (১৫ ফেব্রুয়ারি) আরেক বোন স্বপ্না বাদী হয়ে লালমোহন থানায় মোহাম্মদ আলীসহ পাঁচ জনের নামে আরেকটি মামলা করেন।  

বাজারের ব্যবসায়ী বাহাদুর, ফসিউল আলম, স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আনিছুল হক ও সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রহমান মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্বপ্নার মামলায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে লালমোহন থানার এসআই আবদুল হাই চরফ্যাশনের ওমরপুর চৌমুহনী বাজারে ৪/৫ জন অপরিচিত লোকসহ এসে মোহাম্মদ আলীকে বসত ঘর থেকে বের করে বাজারের লোকের সামনে বেদম মারধর করেন। এক পর্যায়ে তাকে উলঙ্গ করেও মারধর করে তারা।

এ সময় বাজারের লোকজন এগিয়ে এলে এসআই আবদুল হাই তাদের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন বলে জানান ইউপি সদস্য আনিছুল হক।

আনিছুল বলেন, এরপর টেনে হিঁচড়ে একটি ইঞ্জিনচালিত রিকশায় তুলে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে লালমোহন থানায় নিয়ে যান।

রিকশা চালক সালাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দারোগা তাকে রিকশার পা দানিতে শুইয়ে রেখে বুকে পা দিয়ে আঘাত করেন এবং পথে রিকশা থেকে নামিয়েও মারধর করেছেন।

মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী শামিমা নাসরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে এসআই আবদুল হাই ঘরে প্রবেশ করেই মোহাম্মদ আলীকে মারধর শুরু করেন, আর দারোগার সাথের লোকজন শো কেসের দেরাজ খুলে টাকা-পয়সা নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ মোহাম্মদ আলীকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের হেফাজতের (রিমান্ড) আবেদন করে। কিন্তু আদালত তার শরীরে ‘জখম ও নির্যাতনের চিহ্ন দেখে’ তাকে চিকিৎসার জন্য জামিন দেয়। 

এ ব্যাপারে লালমোহন থানায় গেলে এসআই আবদুল হাই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, “মোহাম্মদ আলীর অবস্থা গুরুতর। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল বা ঢাকায় নিতে হবে।”

ওমরপুরের বাসিন্দা মহিবুল্লাহ, মো. নুরে আলমসহ অনেকের অভিযোগ, এসআই আবদুল হাই নির্যাতিত মোহাম্মদ আলীর ভগ্নিপতি সাহাজাহান ওরফে সাজাহান দুবাইয়ের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এ নির্যাতন করেছে।

ভোলার পুলিশ সুপার মোকতার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি বিষয়টি অবহিত হয়েছেন। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে চরফ্যাশন থানার ওসি এনামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এক থানার পুলিশ অন্য থানায় গিয়ে আসামি ধরতে হলে আগে অনুমতি নিতে হয়। এসআই আবদুল হাই বিষয়টি জানননি। ঘটনার পর ফোনে জানিয়েছেন।