বৃহস্পতিবার আদারভিটা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একচালা টিনের ঘরে আব্দুল মান্নানের দুই মেয়ে পাপড়ি (৩৩) ও অনন্যার (৩০) পা শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।
তাদের চাচা আব্দুল হাই জানান, ১৯৯৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় পাপড়ি আর ২০০১ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় অনন্যার আচরণে ‘অস্বাভাবিকতা’ দেখা দেয়। সেই থেকে তাদের পায়ে লাগানো রয়েছে এই শেকল।
তাদের ছোট ভাই কিশোর সম্রাট জানান, তার বাবা চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী ছিলেন। অসুস্থ হয়ে মারা যান ২০১০ সালে। আর মায়ের মৃত্যু হয় ২০১৩ সালে।
“বাবা বেঁচে থাকার সময় দুই বোনের চিকিৎসা কিছুটা হলেও তার মৃত্যুর পর বন্ধ হয় তাও। এখন অসুস্থ দুই বোন ও ছোট ভাইয়ের খাবার-দাবারসহ সবকিছুর ব্যবস্থা আমাকেই করতে হয়। সহযোগিতা করার কেউ নেই। এ কারণে বন্ধ হয়েছে আমারও পড়ালেখা।”
আদারভিটা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শান্তেজা খাতুন বলেন, “পাপড়ি মেধাবী ছাত্রী ছিল। স্কুলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইত। তার স্বপ্ন ছিল শিল্পী হবার। আর অনন্যা হতে চেয়েছিল প্রকৌশলী।
“দরিদ্র পরিবারের অসুস্থ দুই বোনকে নিয়ে ছোট দুই ভাইয়ের মনেও শান্তি নেই। এখন সবার সহযোগিতাই পারে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে।”
তাদের চাচা আব্দুল হাই বলেন, তার ভাই ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা যাওয়ার পর সম্রাটের রোজগার দিয়েই চলে চারজনের সংসার।
“সম্রাট নিজেই রান্নাবান্নাসহ সংসারের সব কাজ করে। অনেক সময় না খেয়েও থাকে। ভাল চিকিৎসা করালে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।”
জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান বৃহস্পতিবার তাদের বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেন। তিনি তাদের খুব শিগগিরই চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
এলাকাবাসী দেশের সচ্ছল মানুষের কাছে এই পরিবারটিকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে।