এমপির ছেলের দেয়ালে ‘অবরুদ্ধ’ এক পরিবার

খুলনার পাইকগাছায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যের ছেলে দেয়াল তুলে একটি পরিবারকে উচ্ছেদ করে জমি দখলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অলীপ ঘটক বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2017, 09:27 AM
Updated : 24 Feb 2017, 10:18 AM

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সংসদ সদস্য নূরুল হকের বড় ছেলে মো. মনিরুল ইসলাম বলছেন, ওই জমি তারা কিনে নিয়েছেন।

ঘটনার জেরে উভয় পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে।

দেয়াল তোলার কারণে পাইকগাছা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ গোলদারের পরিবার এক প্রকার অবরুদ্ধ। তাদের চলাচল করতে হচ্ছে দেয়ালের নিচে গর্ত কেটে বা মই দিয়ে।

আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে আমরা সাত দশক ধরে বসবাস করে আসছি। বাড়ির ২০ শতাংশ জমির দলিল রয়েছে। আর এই জমির পাশের ৩০ শতাংশ খাসজমিও উপজেলা প্রশাসনের মৌখিক সম্মতিতে আমরা ভোগ-দখল করছি।”

আজিজের অভিযোগ, খুলনা-৬ (পাইকগাছা) আসনের সংসদ সদস্য মো. নুরুল হকের ছেলে মনিরুল ইসলাম পুরো ৫০ শতক জমি কিনে নিয়েছেন দাবি করে তাদের বসতবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ‘হুমকি দিচ্ছেন’।

“চলতি বছর ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্য নুরুল হকের ভাতিজা শেখ আলাউদ্দিন আমার পরিবারের ১৬ সদস্যের বিরুদ্ধে পাইকগাছা থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেছে হেনস্তা করার জন্য।”

মামলার পর গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা আত্মগোপনে গেলে ৫ জানুয়ারি মনিরুল লোকজন নিয়ে এসে প্রাচীর তুলে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন বলে জানান আজিজ গোলদার।

“এর এক সপ্তাহ পর এলাকায় ফিরলে মনিরুলের লোকজন আমাকে মারধর করে পুলিশে দেয়। সে সময় আমাকে ২৬ দিন জেলে থাকতে হয়।”

গত দেড় মাস ধরে এই প্রাচীরের ভেতরেই পরিবার নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে জানিয়ে আজিজ বলেন, “দেয়াল তোলার কারণে যাতায়াতের পথ বন্ধ থাকায় আমরা দেয়ালের নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ কেটে কিংবা দেয়ালে মই দিয়ে উঠে যাতায়াত করছি।”

এ ঘটনায় তিনি দুটি মামলা করেছেন জানিয়ে বলেন, মনিরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে বসতবাড়ি ভাংচুরের একটি মামলা করা হয়েছে। আর পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে করা হয়েছে আরেকটি মামলা।

আজিজ গোলদারের ছেলে মো. আসাদুল ইসলামের অভিযোগ, তাদের জমি থেকে উৎখাত করতে ‘উঠেপড়ে লেগেছেন’।

“বিষয়টি সবাইকে জানালেও এখনও কোনো সুরাহা হয়নি। পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্যের ছেলে মনিরুল ইসলাম।

তার ভাষ্য, এই ৫০ শতক জমির মালিক ছিলেন ঠাকুর দাস হালদার ও তার সহোদর অজিত হালদার। তাদের জমি ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে পাঁচ লাখ টাকায় কিনে নেন তিনি।

মনিরুল পাল্টা অভিযোগ করেন, “আজিজ গোলদার ওই দুই সহোদরের জমি অবৈধভাবে দখল করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন।”

দেয়াল তোলার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমাদের কেনা জমি দখলের জন্য দেয়াল তুলেছি।”

যাতায়াতের পথ বন্ধ করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, “দেয়াল তোলা হলেও একটি গেইট রয়েছে। সেখান দিয়ে যাতায়াতে তাদের নিষেধ করা হয়নি।”

গেইট সম্পর্কে আজিজ গোলদার বলছেন, “সেখানে সব সময় নিরাপত্তা প্রহরী থাকে। তারা হুমকি দেয়। গালাগাল করে। সেখান দিয়ে যাতায়াত করা যায় না।”

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য নূরুল হক বলেন, “আমি একজন আইনজীবী। কাগজপত্র দেখে ছেলেকে এই জমি কিনতে সমস্যা নেই বলে জানিয়েছি।”

ওই জমির মালিকানা নিয়ে জানতে চাইলে মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ঠাকুর দাস হালদার ও তার সহোদর অজিত হালদার ওই জমির মালিক ছিলেন বলে জানতাম। পরে তারা ভারতে চলে যান। স্বাধীনতার পর তারা একবার দেশে এসেছিলেন। পরে আর দেখিনি।”

বিরোধ মেটাতে একাধিকবার সালিশ-বৈঠকেও সুরাহা হয়নি বলে জানান পাইকগাছা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এসএম তৈয়বুর রহমান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা একাধিকবার বৈঠক করেছি। এমপি সাহেবও ছিলেন। সমঝোতা হয়নি। পরে এটা আদালতে গড়িয়েছে।”

পাইকগাছা থানার ওসি মারুফ আহম্মদ বলেন, জমির বিরোধসহ তিনটি মামলারই তদন্ত চলছে। শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।