জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল কাদের খানকে তার বগুড়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের পরদিন বুধবার গাইবান্ধায় এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “কাদের খান এক বছর ধরে সাংসদ লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া চারজনকে একটি গুদামে ছয় মাস ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।”
ডিআইজি গোলাম ফারুক বলেন, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া চারজনের মধ্যে কাদের খানের গাড়িচালক আবদুল হান্নান, বাসার তত্ত্বাবধায়ক শাহিন মিয়া ও মেহেদী গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাকিম আদালতে ‘১৬৪ ধারায় জবানবন্দি’ দেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই কাদের খানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া রানা নামের আরেকজন এখনও পলাতক বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য লিটনকে গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর শাহাবাজ গ্রামে তার বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়।
লিটন খুন হওয়ায় শূন্য আসনে উপনির্বাচন হওয়ার কথা আগামী ২২ মার্চ। এ নির্বাচনে কাদের খান জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত জমা দেননি বলে জানান রিটানিং কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ১৯ ফেব্রুয়ারি। এরও চার দিন আগে থেকে ২০-২৫ জনের একদল পুলিশ কাদেরের বাড়ি ঘিরে রেখেছিল ‘জঙ্গি হামলার আশঙ্কায়’ নিরাপত্তার কথা বলে।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা কাদের গত দুই জাতীয় নির্বাচনে দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও এবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন দলের চেয়ারম্যান এরশাদের আইন উপদেষ্টা শামীম হায়দার পাটোয়ারী। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ।
কাদের খানের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি খানপাড়া গ্রামে। তিনি ২০০৮ সালে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
পেশায় চিকিৎসক আবদুল কাদের খান বগুড়া থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক উত্তরের খবর’ নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করছেন।
গাইবান্ধা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মাহবুবুল বলেন, বগুড়া জেলা শহরের রহমান নগরে তার নিজের প্রতিষ্ঠান গরীব শাহ ক্লিনিকের চারতলা ভবনের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আটক অভিযানে অংশ নেন গাইবান্ধা ও বগুড়া থানার পুলিশসহ গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।
এর আগে সোমবার ঢাকার আশুলিয়ায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, লিটন হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের পুলিশ চিহ্নিত করেছে। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হবে।
কাদেরের বগুড়ার বাড়িতে আবার তল্লাশি
কাদের খানের বগুড়ার বাড়িতে দ্বিতীয়বার তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তল্লাশি চালানো হয় বলে জানান গাইবান্ধার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ওসি মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, “তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ গিয়ে ল্যাপটপ, মোবাইল ও সিসি ক্যামেরার ডিভিআরসহ হার্ড ডিস্ক নিয়ে এসেছে।”
কাদেরের গরীব শাহ ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার ইনচার্জ মোহাম্মদ ওয়াহেদ আলী বলেন, রাত ১২টায় গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার রেজিনুর রহমানসহ ৮-১০ জন ক্লিনিকে এসে তল্লাশি চালানোর কথা বলেন।
“এ সময় স্যারের (কাদেরের) স্ত্রী চিকিৎসক নাসিমা বেগম তল্লাশি কাজে সহযোগিতা করেন। ক্লিনিক কাম বাসার চতুর্থ তলায় স্যারের বেডরুমসহ অন্য একটি রুমে তল্লাশি চালানো হয়। রাত সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এই তল্লাশি চলে। তল্লাশি শেষে নাসিমা বেগমের মোবাইল ফোনসহ ক্লিনিকের স্টাফ নূরী, রোবেজা, শেফালীর মোবাইল ফোনও নিয়ে যায় পুলিশ। এছাড়া দুটি ল্যাপটপ এবং সিসি ক্যামেরার ডিভিআরসহ হার্ডডিক্স নিয়ে যায়।”
পুলিশ দু-এক দিনের মধ্যে মোবাইল ফোন ফিরিয়ে দিতে চেয়েছে বলে জানান থিয়েটার ইনচার্জ ওয়াহেদ আলী।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় কাদেরকে গ্রেপ্তারের সময়ও এ বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। তখন পুলিশ কিছু জব্দ করেনি।