শেরপুরে পানির জন্য হাহাকার

বোরো মৌসুমের শুরুতেই পানির জন্য হাহাকার করছে শেরপুরের চাষীরা; দুশ্চিন্তা দানা বাঁধছে আসন্ন চৈত্রের খরাদাহ নিয়ে।

শেরপুর প্রতিনিধিমো. আব্দুর রহিম বাদল, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2017, 05:20 AM
Updated : 22 Feb 2017, 06:36 AM

সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বোরোক্ষেতে সেচের অভাবে কোথাও কোথাও মাটি ফেটে গেছে। কচি চারা শুকিয়ে হলুদ হতে শুরু করেছে কোথাও কোথাও।

সাহাব্দীর চর গ্রামের চাষী হেকমত আলীর অভিযোগ, “বিদ্যুৎ নাই। পল্লী বিদ্যুৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র দুই ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ দিচ্ছে। দুই ঘণ্টার মধ্যে আবার এক ঘণ্টা ভোল্টেজ থাকে না।”

পশ্চিম দড়িপাড়া গ্রামের কিষানি নাজনা বেগম কথা বলতে গিয়ে ক্ষেত দেখিয়ে কেঁদে ফেলেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গরিব মানুষ। ক্ষেত যে লাগাইছি তা ফইডা যাইতাছে গা। ধানগাছ মইরা যাইতাছে। সমস্যা। এহন গরিব মানুষ তেলও কিনবার পাইতাছি না, ক্ষেতে পানিও দিবার পাইতাছি না। ক্ষেতের বাতরে আইলে খালি কান্দন পাইতাছে।”

একই গ্রামের আজগর আলী পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন। তিনিও দুশ্চিন্তায় অস্থির।

“অহন বিদ্যুৎ পাইতাছি না। বিদ্যুৎ না থাকায় তেল কিন্না পানি দিতাছি। অতিসত্বর আমার বিদ্যুতের ব্যবস্থাডা কইরা দেন গো।”

অনেকে শ্যালো মেশিনের বসিয়ে পানি দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এতে খরচ বেশি হওয়ায় এটা তারা সারা মৌসুম চালিয়ে নিতে পারবেন না বলে জানান।

একই গ্রামের আব্দুল্লাহ বলেন, “ক্ষেতখোলা সব মরইরা যাইতাছে গা। তাড়াতাড়ি বিদ্যুতের ব্যবস্থাডা কররা দেন। তেল দিয়া পানি দিয়া আমাগরে পোষাব না।”

চর ভাবনা গ্রামের তরুণ চৌধুরীরও একই বক্তব্য।

“প্রায় ২০-২৫ দিন ধরে সময়মতো বিদ্যুৎ নাই। ক্ষেতগুলা প্রায় চলেই গেছিল। বোরিং করে ডিজেলচালিত নতুন ম্যাশিন কিনে পানি দিয়ে কোনো রকমে ধানগাছগুলো বাঁচায় রাখছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এমনে চললে এক্কেরে মাডে মরা।”

একই গ্রামের কৃষক দবির মিয়া বলেন, “কারেন নাই। ক্ষেত যে মইরা যাইতাছে গা। আমরা যে এহানে কান্দাকাটি করতাছি ক্ষেত মধ্যে। আফনারা কারেনডা ঠিক কইরা দেন হে।”

চরভাবনা গ্রামের গভীর নলকূপ অপারেটর মাধু মিয়া বলেন, “আমগর ওপরে খুব অত্যাচার শুরু অইয়া গেছে গা। মটর চালানি যারা ড্রাইভার আছি তারা এহন খুব বেকাদায়। দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাইলে এক ঘণ্টা ভোল্ডটেজ পাই না। আমগর তো অবস্থা খুব খারাপ। পাবলিকে ধরছে আমরা বিদ্যুৎ চাই। ফসল বাঁচাবার পারতাছি না। আমরা অহন কী করি।”

শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মাসরুল হক খান বলেন, শেরপুরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় প্রায় পাঁচ হাজার সংযোগ রয়েছে।

“গত কদিন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তবে গত দুদিন ধরে জামালপুরে পাওয়ার প্লান্ট পাওয়ার প্যাক চালু হওয়ায় আমরা রাতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাচ্ছি। রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মোটর চালালে সেচকাজ আর ব্যাহত হবে না আশা করছি।”

শেরপুরে এ বছর ৮৯ হাজার ৫৯৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আশরাফ উদ্দিন।

এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মোট জমির ৪৩ হাজার হেক্টর রয়েছে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের আওতায়। বাকি ৪৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি আবাদ হচ্ছে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের আওতায়।