যশোরের বেনাপোল আর ওপারের পেট্রাপোলের মাঝে সীমান্তের শূন্যরেখা মঙ্গলবার একুশের সকাল থেকে মুখর ছিল গান, আবৃত্তি, নাচ আর দুই বাংলার কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-রাজনীতিবিদদের পদচারণায়।
এক সময় ভারত ও বাংলাদেশ অংশে আলাদাভাবে একুশের মঞ্চ তৈরি হলেও এবার চেকপোস্টের শুন্যরেখায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একুশে মঞ্চ’ নামে ছিল মূল আয়োজন।
দুই বাংলার এই যৌথ ভাষা উৎসব উদযাপনের তত্ত্বাবধানে ছিল ‘কাঠ পেন্সিল’ নামের একটি সংগঠন।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ওপারের শিল্পী অরুন্ধতী হোম চৌধুরী ও অর্পিতা চক্রবর্তী; স্বাধীনবাংলা বেতারের শিল্পী খুরশিদ আলম ও রথীন্দ্রনাথ রায়।
ওপার থেকে এসেছিলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এপারের কবি আসাদ চৌধুরী ও নাট্যকার জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে আবৃত্তি শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
কাঠ পেন্সিলের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১১ সাল থেকে বেনাপোল পৌরসভার পক্ষে দুই বাংলার একুশ উদযাপনের মঞ্চসহ অন্যন্য স্থাপনা তৈরিতে কাজ করে আসছেন তারা।
এবার ভাষা উৎসবকে প্রাণাবন্ত করে তুলতে ভাষা সৈনিক সব্যসাচী কবি শামসুল হক চত্বর, বর্ণমালা গ্যালারি ও বই মেলারও আয়োজন করা হয়েছে।
সকালে অনুষ্ঠান শুরুর আগেই নিজ নিজ ভূ-খণ্ডে অপেক্ষায় ছিলেন আয়োজকরা। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১০টা ১৫ বাজার সঙ্গে সঙ্গে সীমানা পেরিয়ে শূন্যরেখায় পা রাখেন পশ্চিমবাংলার প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল তাদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
পশ্চিমবাংলার খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাতা বসু, লোকসভার সদস্য মমতা ঠাকুর, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি রহিমা মণ্ডল, বিধানসভার বিধায়ক বিশ্বজিত দাস, বনগাঁ পৌরসভার পৌর প্রধান শংকর আঢ্যসহ রাজনীতিবিদ, কবি, শিল্পী, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা ছিলেন ওপার বাংলার প্রতিনিধি দলে।
দুই বাংলার প্রতিনিধিরা নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষ থেকে শূন্যরেখায় নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে স্মরণ করেন ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের, যাদের আত্মত্যাগের স্মরণে পুরো বিশ্ব আজ একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করে মাতৃভাষার দিবস হিসেবে।
পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “ভাষার টানে, বাঙালির নাড়ির টানে ভাষাদিবস পালন করতে এসেছি। একুশের গৌরবের উত্তরাধিকারী পৃথিবীর সব বাঙালি। এর ব্যাপ্তি শুধু ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, অনেক বিস্তৃত।”
আওয়ামী লীগ নেতা পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাঙালির অর্জনকে দুই বাংলা একসঙ্গে পালন করছি, এটা খুবই গর্বের বিষয়। দুই দেশের মৈত্রীতে এটা অনুপ্রেরণা যোগাবে।”
তিনি বলেন, “ভাষা আন্দোলন আমাদের অধিকারবোধের জম্ম দিয়েছিল। রক্তের বিনিময়ে সেই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এ ঘটনা বিশ্বে বিরল।”