আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ২০০৮ সালের ভোটে এমপি হওয়া আব্দুল কাদেরের বগুড়া শহরের বাসভবনে বৃহস্পতিবার রাতে অবস্থান নেয় পুলিশ।
এ বিষয়ে বগুড়া ও গাইবান্ধার পুলিশ কর্মকর্তারা কোনো কথা বলছেন না। তবে কাদের পরিবার জানিয়েছে, ‘নিরাপত্তা দিতে’ তাদের এই অবস্থান বলে পুলিশ সদস্যরা তাদের বলেছেন।
সুন্দরগঞ্জের ছাপোড়হাটি গ্রামের কাদের পেশায় চিকিৎসক। তার স্ত্রী নাছিমা বেগমও একই পেশার। বগুড়ায় এই দম্পতির বাসায়ই গড়ে তোলা হয়েছে ‘গরীব শাহ ক্লিনিক’।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা কাদের জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য। গত দুই জাতীয় নির্বাচনেই দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও এবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন দলের চেয়ারম্যান এরশাদের আইন উপদেষ্টা শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে ভোট হবে আগামী ২২ মার্চ। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রভাব থাকা সুন্দরগঞ্জের এই উপ-নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ।
এর বাইরে আর কারও প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের কথা শোনা যায়নি।
আব্দুল কাদের এই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করতে চান বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী নাছিমা বেগম।
এখন বাসা ঘিরে পুলিশের অবস্থানে বিস্ময় প্রকাশ করে শুক্রবার তিনি ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ক্লিনিক কাম বাসায় এতদিন নিরাপত্তার অভাব হলো না। এই মুহূর্তে পুলিশের নিরাপত্তার বিষয়টা মাথায় খেলে না। এটা নিয়ে ভাবছি।”
বিকালে বগুড়া শহরের রহমান নগর এলাকায় ওই বাড়িতে গিয়ে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের ২৫ থেকে ৩০ জন পুলিশকে দেখা যায়।
সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের পুলিশ সদস্য পরিচয় দিলেও নাম-পদবী জানাতে অস্বীকার করেন।
ক্লিনিকের সামনে বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায়। পুলিশের অবস্থান ও নিরাপত্তা কড়াকড়িতে ক্লিনিকেও এদিন রোগী কম দেখা যায়।
ডা. নাছিমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার পর থেকে পুলিশ বাড়ির সামনে অবস্থান নেয় এবং সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে।
তিনি জানান, পুলিশের অবস্থানের কারণে বৃহস্পতিবার রাত থেকে তার স্বামী ক্লিনিক থেকে বের হননি। তাদের আটক কিংবা গ্রেপ্তারের জন্য নয়, ‘ভালোর জন্যই’ পুলিশ অবস্থান করছে বলে জানানো হয়। বলছে, নিরাপত্তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা অবস্থান করছেন।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বাড়ি থেকে বগুড়া ফেরার পথে পুলিশ গোবিন্দগঞ্জে গাড়ি থামিয়ে তার দুই কর্মী মেহেদী ও শাহীনকে নামিয়ে নেয়। এরপর তিনি বগুড়া চলে আসেন। বগুড়ায় আসার পরই পুলিশ বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে কোথাকার পুলিশ কাজ করছে তা জানি না। এ বিষয়ে স্যারের (পুলিশ সুপার) সাথে কথা বলেন।”
বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জমান সাংবাদিকদের বলেন, “বিষয়টি জানি না। কী কারণে ওই বাসার সামনে পুলিশ অবস্থান করছে তা বলতে পারবে গাইবান্ধা পুলিশ।”
গাইবান্ধার পুলিশ সুপারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
পরে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল ফারুককে ফোন করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য তার (ডা. কাদের) বাড়িতে পুলিশ ফোর্স দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে এসপি স্যার ভালো বলতে পারবেন।”
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন গাইবান্ধা প্রতিনিধি তাজুল ইসলাম রেজা]