জন্মস্থানে সার্জেন্ট জহুরুল হকের ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বন্দি অবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারানো সার্জেন্ট জহুরুল হকের স্মৃতিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্থাপনা থাকলেও কোনো স্মারক নেই জন্মস্থান নোয়াখালীতে।

নোয়াখালী প্রতিনিধিআবু নাছের মঞ্জু, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2017, 01:36 PM
Updated : 15 Feb 2017, 02:55 PM

পৈত্রিক বাড়িও নানা জটিলতায় হারিয়ে যাওয়ার পথে। এলাকাবাসী নিজ জেলায় তার ভাস্কর্য নির্মাণসহ স্মৃতি রক্ষার্থে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।   

জহুরুল হকের জন্মস্থান নোয়াখালী সদরের সোনাপুর গ্রামে। প্রতিবছর জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে স্থানীয় কর্মসূচি।

সোনাপুর জেলা পরিষদ কলোনিতে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে তার পৈত্রিক বাড়িটি।

স্থানীয়রা জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অমলে জেলা পরিষদ এ বাড়ি উচ্ছেদ করতে কয়েক দফা উদ্যোগ নেয়। তখন এলাকাবাসী প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টে রিট হওয়ার পর বাড়িটি রক্ষা পায়।

সার্জেন্ট জহুরুল হকে পৈত্রিক বাড়ি

নোয়াখালী শহরের সোনাপুরে ১৯৩৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন জহুরুল হক। নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৬৫ সালে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন তিনি।

এররপ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা (রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য) দায়ের করা হয়। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। মামলায় ৩৫ জন আসামির মধ্যে সার্জেন্ট জহুরুল হক ছিলেন ১৭ নম্বরে।

ওই মামলার বিচারকাজ চলাকালে ১৯৬৯ এর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা ক্যান্টমেন্টে বন্দি শিবিরের সামনে সৈনিকদের খাবারের উচ্ছিষ্ট সংগ্রহ করতে আসা শিশুদের ওপর পাকিস্থানি সেনাদের নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন তিনি। এ নিয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হকের সঙ্গে ওই সময় হাবিলদার মনজুর শাহর কথা কাটাকাটি হয়।

এর জেরে পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে ঘর থেকে বের হলে মনজুর শাহ তাকে গুলি করেন। পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ার পর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাকে জখম করা হয়। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হলে ওই রাতেই তার মৃত্যু হয়।

তার মৃত্যুর খবরে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন সারাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এই হত্যাকাণ্ডের সাত দিনের মাথায় জনতার দাবির মুখে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জহুরুল হকের চাচাতো বোন ফতেমা হক বলেন, “পাকিস্তানি সামরিক জান্তা আমার ভাইয়ের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য আদায় করতে চেয়েছিল। তা করেননি বলেই ওরা তাকে হত্যা করেছে। অথচ তার স্মৃতি রক্ষায় এ জেলায় কিছুই করা হয়নি।”

স্বাধীনতার পর সার্জেন্ট জহুরুল হকের সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের নামকরণ করা হয় জহুরুল হক হল। আর বিমানবাহিনীর চট্টগ্রাম বেইজ জহুরুল হকের নামে নামকরণ করা হয়।

অথচ নিজ জেলা নোয়াখালীতে তার স্মৃতিতে সরকারিভাবে কোনো স্থাপনা বা স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন ফাতেমা।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নোয়াখালীর সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন বলেন, সার্জেন্ট জহুরুল হক নোয়াখালীবাসীর গর্ব। অথচ স্বাধীনতার এতকাল পরেও নিজ জেলায় তিনি অবহেলিত।

“প্রশাসনিকভাবে তাকে স্মরণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় নতুন প্রজন্ম জাতির এই বীর সন্তানকে ভুলতে বসেছে।”

নোয়াখালীতে সার্জেন্ট জহুরুল হকের স্মৃতিতে একটি ভাষ্কর্য তৈরির দাবি জানান তিনি।

শহীদ জহুর-ওদুদ স্মৃতি সংসদের সদস্য সচিব মুক্তিযোদ্ধা মিয়া মো. শাহজাহান বলেন, কয়েক বছর আগে জেলা শহরে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের স্মৃতি রক্ষায় একটি ভাষ্কর্য করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটিও করা হয়েছিল। কিন্তু কাজটি আর করা হয়ে ওঠেনি।

তবে জহুরুল হকের স্মৃতি রক্ষায় নাগরিক সমাজ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করলে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস।

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী খুরশিদ আলম জানান, এ বীর শহীদের সম্মানে তার স্মৃতি রক্ষায় তাদের পরিকল্পনা রয়েছে।