গ্রেপ্তার ব্যক্তি নাম আশফাকুল ইসলাম মিলন (৩৫) হলেও তিনি ‘মিলন চক্রবর্তী’ নাম নিয়ে প্রতারণার একটি চক্র তৈরি করেছিলেন বলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে।
আশফাক খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঞ্চননগর গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে। মাগুরা সদর উপজেলার চেঙ্গারডাঙ্গা গ্রামের বিকাশ বিশ্বাসের মেয়ে মিতা বিশ্বাসকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে থাকছিলেন তিনি।
শ্বশুর বাড়ি থেকে বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন মাগুরা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. সালাহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, খুলনায় আশফাকুলের স্ত্রী ও একটি সন্তান রয়েছে। পরিচয় গোপন করে ২০১৩ সালে মিতা বিশ্বাসকে বিয়ে করেন তিনি।
“আশফাক নিজেকে ব্রাহ্মণ পারিচয় দিয়ে পুরোহিত সেজে বিয়ে দেওয়ার কাজসহ নিয়মিত পূজা-অর্চ্চনার দায়িত্বও পালন করতেন।”
আশফাক কিছুদিন আগে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে চয়ন বিশ্বাস নামে এক যুবকের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়েছিলেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ আসে।
সেই অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে আটক করা হয় বলে জানান এসআই সালাহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, আশফাকের কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতে তার একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে।
“পাসপোর্টে দেখা গেছে, আশফাক ‘মিলন চক্রবর্তী’ পরিচয়ে গত দুই-তিন বছরে ৫০ বার ভারতে গেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতে থাকা শ্বশুরের (বিকাশ বিশ্বাস) সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য তিনি এই ছদ্মবেশ ধরেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
কিছুদিন আগে শ্বশুরের ১৫ লাখ টাকা দিয়ে মাইক্রোবাস কিনে পরে তা আশফাক বিক্রি করে দেন বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “তার বাড়ি ডুমুরিয়া এলাকায় চরমপন্থি মৃণাল বহিনীর ব্যাপক তৎপরতা ছিল। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় মৃণালসহ তার অনেক ক্যাডার দেশ ছাড়ে ভারতে চলে যায়। আশফাক সে ধরনের কোনো সংগঠনের সদস্য কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আশফাক সাংবাদিকদের বলেন, “আমি প্রতারক নই। আমি ২০ পারা কোরআনে হাফেজ।”
আশফাক বলেন, “২০০৮ সালে আমি ভারতে গিয়ে আইনগতভাবে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করি। আমি প্রায়ই ভারতে যাই। সেখানে আমার ল্যান্ডের ব্যবসা রয়েছে। ভারতে আমার বর্তমান শ্বশুরের জমা-জমিও রয়েছে, যেগুলো আমি দেখাশোনা করি।”
চাকরি দেওয়ার নাম করে চয়ন নামে যুবকের কাছ থেকে টাকা নিলেও তাদের সঙ্গে আগেই ‘মিটমাট হয়ে গেছে’ বলে দাবি করেন আশফাক।
আশফাকের স্ত্রী মাগুরা সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মিতা বিশ্বাসের কোনো অভিযোগ নেই স্বামীর বিরুদ্ধে।
মিতা সাংবাদিকদের বলেন, “বিয়ের আগে মিলন মুসলমান ছিলেন বা আগে স্ত্রী, সন্তান আছে সেটা গোপন করেছিলেন। তবে এখন আমি আমার বাবার বাড়িতে তার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে সংসার করছি।”
আশফাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিজের পরিচয় ও তথ্য গোপন করে তিনি অন্যায় করেছেন। এখন যে শাস্তি হয় তা তিনি ভোগ করবেন।
কারাগার থেকে বেরিয়ে মিতার সঙ্গে সংসার করতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, “কারণ সে সব জেনেও আমাকে ভুল বোঝেনি।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয় আশফাককে। প্রতারণার আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আশফাকের কাছে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যাওয়ায় জালিয়াতির অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা করেছে পুলিশ। এই মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিতে রোববার আবেদন করা হবে বলে জানান এসআই সালহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, “আশফাক অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ। তাছাড়া সে প্রযুক্তিগতভাবে অনেক পারদর্শী। পুলিশ বিভিন্ন দিক ভেবে তদন্ত করছে।”