শামুক বেচে জীবন-জীবিকা

শার্শার গরিব শিক্ষার্থীরা শখ মেটায় শামুক কুড়িয়ে; আর অনেকে শামুক বেচে চালায় সংসার। তবে সম্প্রতি অন্য অনেক প্রাণীর মতো শামুকও হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কায় উদ্বেগ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2017, 03:11 AM
Updated : 28 Jan 2017, 04:14 AM

যশোরের শার্শা উপজেলায় সরজমিনে দেখা গেছে, গোগা বিলপাড়া, লক্ষ্মণপুর, বাহাদুরপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে শামুকের হাট। আর বিল থেকে শিশুরা কুড়িয়ে আনছে শামুক।

বিলপাড়া গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আব্দুস সালাম তাদেরই একজন।

সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্কুলে যাওয়ার সময় মা-বাপের কাছে টাকা চালি দিতি পারে না। তাই স্কুল ছুটির পর কিম্বা বন্ধের দিন শামুক কুড়াই।

“সারাদিন পাঁচ-ছয় কেজি শামুক পাই। পরে বিলকান্দার মোড়ে নিয়ে মাহাবুরের কাছে বেচি। ইচ্ছা হলি মণ্ডা-মিডাই খাতি পারি।”

তার মতো আরও আছে একই গ্রামের চতুর্থ শ্রেণির কোহিনূর, মরিয়ম, বিকাশ, রনিসহ অনেকে। সবার মুখে একই কথা।

শামুক কুড়ানি কোহিনূরের মুখে মিষ্টি হাসি, “স্কুল ছুটির পর কিম্বা বন্ধ থাকলে বিল-বাঁওড়ে শামুক কুড়াই। হাঁটুপানি বা কাঁদাপানিতে কুড়াই। বেচার পর যে টাকা হয়…মাঝে মাঝে কিছু টাকা মায়ের কাছে জমাও রাখি।”

অন্য কাজ না থাকলে শামুক কুড়িয়ে সংসারও চালায় অনেকে। আর শার্শা থেকে যারা শামুক কিনে নিয়ে যায় তারা পুরোদস্তুর ব্যাপারি।

শামুক কিনতে আসা খুলনার মাহবুব আলী বলেন, “এখান থেকে প্রতি কেজি শামুক আমরা পাঁচ-ছয় টাকায় কিনে খুলনায় নিয়ে নয়-দশ টাকায় বিক্রি করি। এটা দিয়েই সংসার চলে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়াও চলে এ দিয়ে।”

খামারে মাছের খাবার হিসেবে শামুক ব্যবহৃত হয় বলে তিনি জানান।

বাহাদুরপুর গ্রামের সেতুর পাশে অস্থায়ী বাজারে শামুক কিনতে আসেন সাতক্ষীরার নূর ইসলাম।

তিনি হেসে বলেন, “শামুক কুড়িয়ে বাচ্চারা শখ মেটায়। আর আমরা বিক্রি করে চালাই সংসার।”

শার্শার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত মণ শামুক খুলনা, বাগেরহাট, নোয়াপাড়া, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

তবে শামুকের এই বিকিকিনিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জয়দেব কুমার সিংহ।

তিনি বলেন, “শামুক আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ। আজ অনেক প্রাণী বিলুপ্তি হয়ে গেছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে শামুক কুড়িয়ে নিলে একদিন এরাও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।”

মুক্ত জলাশয় থেকে শামুক কুড়ানো বন্ধ করে নিয়মতান্ত্রিক চাষে চাষিদের উৎসাহিত করার পরামর্শ দেন তিনি।