সাদুল্লাপুরের ফিরে আসা অপর দুজনের মুখেও একই কথা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার পর পাশের সাদুল্লাপুরের নিখোঁজ চারজনের বাকি দুই নেতাও বাড়ি ফিরে আগের দুজনের মতো একই কথা বলছেন।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2017, 03:43 PM
Updated : 21 Jan 2017, 03:43 PM

সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুল ইসলাম প্রিন্স ও একই ইউনিয়নের যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম শাপলা শনিবার ভোরে বাড়ি ফিরে আসেন।

তারা দুজনই বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তবে তারা কোন বাহিনীর সদস্য, তা তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। কিন্তু তাদের নিয়ে যাওয়ার পর দুইবার স্থান বদল করা হয়েছে।

এর আগে নিখোঁজের ১০ দিন পর বৃহস্পতিবার ভোরে বাড়ি ফেরেন উপজেলা যুবলীগ সহ-সভাপতি ও দামোদরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনোয়ারুল হাসান জীম মন্ডল এবং দামোদরপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদেক।

তারাও ফিরে বলতে পারেননি কারা তাদের নিয়ে গিয়েছিল। তবে আসার সময় বুঝতে পারেন তাদের নীলফামারী আটক রাখা হয়েছিল।

এই ৪ নেতা নিখোঁজ হওয়ার পর সাদুল্লাপুর থানায় অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি করেন তাদের পরিবারের লোকজন। এছাড়া তাদের সন্ধান দাবিতে গত ৯ দিন ধরে উপজেলা শহর ও নলডাঙ্গায় মিছিল, মিটিং, হরতাল-অবরোধ, মানববন্ধন, থানা ঘেরাও কর্মসূচি ও সংবাদ সম্মেলন করে এলাকাবাসী ও স্বজনরা।

স্বজনদের অভিযোগ, শাদা পোশাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এ চারজনকে তুলে নিয়ে যায়, কিন্তু জেলা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি।

ফিরে আসার পর স্বজনদের সঙ্গে মাইদুল ইসলাম প্রিন্স

মাইদুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, কয়েকজন সাদা পোশাক পরা লোক শুক্রবার রাত আনুমানিক ১টার দিকে তাদের চোখ বাঁধা অবস্থায় মাইক্রোবাসযোগে একটি ফাঁকা জায়গায় নামিয়ে রেখে যায়। তারপর তাদেরকে বলে- ‘সামনের সড়কে তোমাদের মোটর সাইকেল (সুজুকি) রাখা আছে ওটি নিয়ে সোজা বাড়ি চলে যাও।’

তিনি বলেন, এই ১১ দিন কোথায় ছিলেন তা তারা বুঝতে পারেননি। কিন্তু এক জায়গায় তাদেরকে পাশাপাশি কক্ষে চোখবাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছিল। শুধু পায়খানা ও প্রস্রাবের সময় চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হতো।  

তাদের কোনো জিনিসপত্র খোয়া যায়নি। মাঝেমধ্যে অসুস্থ হলে তাদের ডাক্তার ডেকে চিকিৎসাও করানো হয়েছে বলে জানান প্রিন্স।

প্রিন্স আরও জানান, তাকে নলডাঙ্গা থেকে মোটরসাইকেলসহ তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিল- ‘আমাদের সংগে যাওয়া লাগবে’। কোথায় প্রশ্ন করলে তারা বলে-‘স্যারের সংগে দেখা করা লাগবে’।

“তারপর এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে রাখে। ওইদিন রাতে আবার অন্য এক জায়গায় নিয়ে যায়। তারপরের রাতে আবার স্থান বদল করে অন্য স্থানে নিয়ে রাখে।  সেখানে চোখ বাঁধা অবস্থায় এতদিন ছিলাম।”     

প্রিন্স আরও জানান, ফিরে আসার সময় তারা দুইজন মোটরসাইকেলযোগে সামনের দিকে কিছুদূর যাওয়ার পর দিনাজপুরের পারবর্তীপুর উপজেলার খোলাহাটির ট্যাক্সের হাট এলাকায় পৌঁছেন। সেখানে তারা দুজন অসুস্থবোধ করলে তার (প্রিন্সের) বড়ভাই নয়নকে ফোন করেন।

পরে নয়ন মাইক্রোবাস নিয়ে গিয়ে রাত ৩টার দিকে তাদেরকে বাড়ি নিয়ে যান বলে প্রিন্স জানান।

শফিউল ইসলাম শাপলা

শফিউল ইসলাম শাপলা বলেন, প্রিন্সের গায়ের উপর ফেলে দেয় তাকে (শাপলা)। কিন্তু তখনও তারা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে, তারা মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরবেন।

তিনি বলেন, তারা মনে করছেন, হয়ত তাদেরকে এখানেই গুলি করে শেষ করে দেওয়া হবে। আটক অবস্থায় তাদেরকে একাধিকবার বলা হয়েছে গোসল করে তওবা ও নামাজ পড়। তোদের আয়ূ শেষ।

“কিন্তু যখন দেখলাম আটককারীদের মাইক্রোবাসটি ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে, তখন তাকিয়ে দেখি সামনের সড়কে প্রিন্সের মোটরসাইকেলটি দেখা যাচ্ছে।” 

শাপলা বলেন, তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তাকে তাদের একটি পরিচয় পত্র দেখান। এতে তিনি বুঝতে পারেন এরা আইন শৃংখলা বাজিনীর সদস্য। তবে দেশের কোন বাহিনীর সদস্য তা তিনি বুঝতে পারেননি।

প্রিন্সের বড় ভাই নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও নলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম নয়ন বলেন, শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে তার ভাই প্রিন্স মোবাইলে ফোনে জানান তারা দুজন দিনাজপুরের পারবর্তীপুর উপজেলার খোলাহাটির ট্যাক্সের হাট এলাকায় অবস্থান করছেন। এরপর সাদুল্লাপুর থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে গিয়ে তাদের বাড়ি নিয়ে আসেন তিনি।

সাদুল্লাপুর থানার ওসি ফরহাদ ইমরুল কায়েস জানান, তিনি তাদের ফিরে আসার কথা শুনেছেন। কিন্তু কারা নিয়ে গেল আবার রেখে গেল তা বলতে পারেননি।  

গত ৯ জানুয়ারি রাতে সাদুল্লাপুর উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দামোদরপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মনোয়ারুল হাসান জিম মণ্ডল ও দামোদরপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদেক লালবাজার থেকে মোটরসাইকেলযোগে নলডাঙ্গা ফিরছিলেন। এরপর থেকে তাদের খোঁজ ছিল না।

পরদিন (১০ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে নলডাঙ্গা কাচারিবাজার এলাকা থেকে ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম শাপলাকে ও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নলডাঙ্গা রেলগেট এলাকা থেকে নলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুল ইসলাম প্রিন্সকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে মোটরসাইকেলসহ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) ভোরে বাড়ি ফেরেন মনোয়ারুল হাসান জীম মন্ডল ও সাদেকুল ইসলাম সাদেক।