মাগুরা বিএনপির বিবাদ প্রকাশ্যে

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যখন সারাদেশে ঘর গোছানোর লক্ষ‌্য নিয়েছে, তখন মাগুরা জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন।

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2017, 09:35 AM
Updated : 21 Jan 2017, 09:36 AM

দ্বিধাবিভক্ত জেলা বিএনপির এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ আলী করীম; অন‌্য পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন একই কমিটির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী।

তারা দুজনই বিভিন্ন শাখার কমিটি গঠন করছেন। একই শাখায় সৈয়দ করীম দিচ্ছেন একটি কমিটি, ওই শাখায়ই আবার মোকাদ্দেস আলী দিচ্ছেন আরেকটি কমিটি। 

মোকাদ্দেস আলীর অভিযোগ, কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে আহ্বায়ক সৈয়দ করীম কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই একের পর এক বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠন করছেন।

“ঢাকা থেকে বিশেষ ব্যক্তির ইশারায় লিখে নেওয়া কমিটি সৈয়দ করীম মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া গ্রামে বসে স্বাক্ষর করছেন। এসব কমিটিতে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের স্থান নেই।”

এ কারণে দলকে শক্তিশালী করতে সভা করে ‘সবার মত নিয়ে প্রকৃত কমিটি’ গঠন করছেন বলে দাবি করেন মোকাদ্দেস।

তাকে সমর্থন করে সৈয়দ করীমের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহম্মেদ।

তিনি বলেন, “সৈয়দ করিম নিভৃত পল্লীতে বসে রাতের আঁধারে একের পর এক ভূতুড়ে কমিটি গঠন করে যাচ্ছেন। বিগত দিনে যারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, মামলা খেয়ে জেল-জুলুম খেটেছেন, তাদের নাম ওই কমিটিতে নেই। সৈয়দ করীম পকেট কমিটি করে দলকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।”

করীমের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তুলেছেন জেলা বিএনপির অপর যুগ্ম আহ্বায়ক আয়ুব হোসেনসহ অনেকে।

করীমের পক্ষও কম ভারী নয়।

পৌর বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক খান মুস্তাক আহমেদ বলেন, সৈয়দ করীম সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন করছেন।

জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, সৈয়দ করীম অধিকাংশ কনভেনরের মত নিয়ে বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন করছেন।

“প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী যে কমিটি গঠন করেছেন তা অবৈধ। তার কমিটি গঠনের কোনো এখতিয়ার নেই। তাছাড়া তার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা-কর্মী নেই।”

এ জন্য মোকাদ্দেস হোসেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দায়ী করেন।

“কেন্দ্র থেকেই বিএনপির রাজনীতি সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। বিএপির শীর্ষ পর্যায়ের ভুল সিদ্ধান্তর কারণে দলের আজ দুরবস্থা। বিএনপির শত্রু বিএনপি নিজেই।”

আহ্বায়ক সৈয়দ করীম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “প্রতিটি কমিটিই মতামতের ভিত্তিতে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় গঠন করা হয়েছে। এ কারণে কেন্দ্র এগুলোর অনুমোদন দিয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ও পাল্টা কমিটি গঠন করে একটি পক্ষ দলকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”

শীর্ষ নেতাদের কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করেছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফারুক আহম্মেদ।

তিনি বলেন, “কোনো পক্ষেরই দলের প্রতি ভালোবাসা নেই। তারা দলের মঙ্গল চায় না। নিজেদের স্বার্থেই তারা কাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে দেখছি, যিনি নেতৃত্ব পাচ্ছেন তিনিই পকেট কমিটি গঠন করে দলে বিভাজন তৈরি করছেন।”

একই অভিযোগ করেন নাম না জানানো আরও অনেক নেতা-কর্মী ।

২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০১৫ সালের শেষ ভাগ পর্যন্ত কবির মুরাদ মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আলী আহম্মেদ।

২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরীকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক করে দল পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নয় মাস দায়িত্ব পালন করলেও তিনি গ্রুপিং মিটিয়ে দল পুনর্গঠনে ব্যর্থ হন। পরে তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

গত বছরের ২৯ নভেম্বর মহম্মদপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী করীমকে আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা বিএনপির সাভাপতি সৈয়দ মোকাদ্দেস আলীকে (আরাফাত রহমান কোকোর মামাশ্বশুর) প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১৭৬ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় ১৮ জনকে।

গত ডিসেম্বর সৈয়দ আলী করিম জেলার চারটি উপজেলা, একটি পৌরসভা ও দক্ষিণ মাগুরা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। এ কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। এরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে ৭ জানুয়ারি।

এদিকে মাগুরা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সভা করে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী মাগুরা সদর, দক্ষিণ মাগুরা, মাগুরা পৌরসভা, শ্রীপুর উপজেলা ও ১৬ জানুয়ারি শালিখা উপজেলা বিএনপির পাল্টা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।