ভারতের মওলানা মোহাম্মদ শামিমের বয়ানের মধ্য দিয়ে শুক্রবার ফজর নামাজের পর ইজতেমা শুরু হয়। তার হিন্দি বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মওলানা নুরুর রহমান।
ইজতেমা মাঠের দায়িত্বে নিয়োজিত মুরব্বি গিয়াসউদ্দিন জানান, আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রোববার দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শেষ হওয়ার কথা।
গত শুক্রবার শুরু হয়ে রোববার সফলভাবে শেষ হয়েছে ইজতেমার প্রথম পর্ব।
১৯৬৬ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা হয়ে আসছে। চাপ কমাতে ২০১১ সাল থেকে ইজতেমাকে দুই পর্বে বিভক্ত করা হয়। তার পরও স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১৫ সাল থেকে দেশের অর্ধেক জেলা প্রথম দুই ধাপে এবং বাকি অর্ধেক জেলা পরের বছর দুই ধাপে অংশ নিয়ে আসছে।
মুরব্বি গিয়াসউদ্দিন জানান, তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতিবছর এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমায় দেশের বাইরে থেকেও অতিথিরা এসেছেন। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের সদস্যরা এসেছেন।
প্রতিবারের মতো ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিমাংশে বিদেশি মেহমানদের জন্য বিশেষভাবে টিনের ছাউনির মাধ্যমে পৃথক কামরা তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
ইজতেমা উপলক্ষে সব ধরনের সেবা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিআরটিসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ইজতেমা উপলক্ষে বিআরটিসি বিভিন্ন রুটে ২২৮টি স্পেশাল বাস সার্ভিস চালু করেছে।
চালু করা হয়েছে বিশেষ রেল সার্ভিস।
সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড তুরাগ নদের সাতটি স্থানে ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে।
ডেসকোর টঙ্গী পূর্ব বিভাগের সহকারী উপ-প্রকৌশলী মো. হাসিবুল ইসলাম জানান, ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো গ্রিড নষ্ট হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হবে না। ইজতেমা এলাকায় চারটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর ও পাঁচটি ট্রলি-মাউন্টেড ট্রান্সফরমার সংরক্ষণ করা হয়েছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান জানান, ইজতেমাস্থলে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ফায়ারম্যানরা অবস্থান করছেন। ময়দানের প্রত্যেক খিত্তায় ফায়ার ডিস্টিংগুইশারসহ ফায়ারম্যান ও বিদেশি মেহমানখানা এলাকায় পানিবাহী গাড়ি, তিন সদস্যের ডুবুরি ইউনিট, একটি স্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট ও পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স থাকছে।
টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পারভেজ আলম জানান, নিয়মিত শয্যা ছাড়াও অতিরিক্ত শয্যা বাড়িয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মন্নু গেট, অ্যাটলাস গেট, বাটা কারখানার গেট, টঙ্গী হাসপাতাল মাঠসহ ছয় জায়গায় অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সার্বক্ষণিকভাবে ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বুধবার থেকে ছয় হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য ইজতেমাস্থলে নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন।
“এছাড়া সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন। টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে পুলিশের কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। ইজতেমা এলাকায় বাইনোকুলার, সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার, মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে পুলিশ, স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করছে।”
পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, আনসার ও তাবলিগ সদস্যরাও কাজ করছেন বলে জানান পুলিশ সুপার।
দ্বিতীয় পর্বে যে ১৭ জেলা অংশ নিচ্ছে
ঢাকা (আংশিক), মেহেরপুর, লালমনিরহাট, রাজবাড়ী, দিনাজপুর, হবিগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী, বাগেরহাট, চাঁদপুর, পাবনা, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, বরগুনা ও বরিশাল।