গাইবান্ধার নিখোঁজ দুজন ফিরে এসে যা বললেন

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত‌্যাকাণ্ডের মধ‌্যে পাশের উপজেলার নিখোঁজ দুই আওয়ামী লীগ নেতা ১০ দিন পর ফিরে এলেও কারা কেন তাদের ধরে নিয়েছিল, তার কিছুই বলতে ‘জানেন না’ তারা।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2017, 02:44 PM
Updated : 19 Jan 2017, 07:22 PM

সাদুল্লাপুর উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও দামোদরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনোয়ারুল হাসান জিম মণ্ডল এবং দামোদরপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদেক বৃহস্পতিবার ভোরে বাড়ি ফিরে আসেন।

গত ৯ জানুয়ারি রাতে এই দুজনের পর সকালে সাদুল্লাপুরের নলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুল ইসলাম প্রিন্স এবং নলডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম শাপলাও নিখোঁজ হন।

তার ১০ দিন আগে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নিজের বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ সংসদ সদস‌্য লিটন। খুনিরা এখনও চিহ্নিত না হলেও হত‌্যামামলায় জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মনোয়ার ও সাদেকের ফিরে আসার খবর পেয়ে উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নে তাদের বাড়িতে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাংবাদিকরাও যান।

দক্ষিণ জামুডাঙ্গা গ্রামে মনোয়ার এবং পশ্চিশ দামোদরপুর মরুয়াদহ গ্রামে সাদেকের বাড়ি।

গণমাধ্যমকর্মীরা কথা বলতে চাইলে ‘ক্লান্ত’ বলে এড়িয়ে যেতে চান দুজনই। পরে কথা বলতে রাজি হন তারা।

মনোয়ারুল হাসান জিম মণ্ডল ও সাদেকুল ইসলাম সাদেক

দুজনই জানান, বুধবার রাত ১২টার দিকে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের কাছে ফাঁকা জায়গায় মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে তাদের মোটর সাইকেল দেওয়া হয়। নিজেদের ওই মোটর সাইকেলেই বাড়ি ফেরেন তারা।

যারা তাদের ধরে নিয়েছিল, ছেড়ে দেওয়ার সময় তারা বলেছিলেন- ‘সামনে তোমাদের মোটর সাইকেলটি দাঁড় করানো আছে। ওটি নিয়ে সোজা সামনের দিকে চলে যাবি; পেছনে তাকাবি না’।

অচেনা ওই পথে মোটর সাইকেল চালিয়ে কিছুদুর আসার পর একটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে সৈয়দপুর লেখা দেখে তারা বুঝতে পারেন, নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের কাছে ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের কোথাও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

মনোয়ার বলেন, তার কোনো জিনিসপত্র খোয়া যায়নি। মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন, হাতের আঙ্গুলের সোনার আংটি ও নগদ ৪০ হাজার ২১০ টাকাসহ সব জিনিসপত্র অক্ষত অবস্থায় ফেরত পেয়েছেন তিনি।

“তবে কোথায় রেখেছিল বুঝতে পারিনি। এই নয় দিন চোখ বাঁধা ছিল।”

তুলে নেওয়ার দুদিন পর গোসল করিয়ে ভালো খাবার দেওয়া হয় এবং নামাজ পড়ে তওবা করতে বলা হয় বলে জানান মনোয়ার।

স্বজনদের মাঝে মনোয়ারুল হাসান জিম মণ্ডল

তিনি বলেন, বুধবার রাতে তাকে জানানো হয় মোটর সাইকেলে তেল আছে কি না? ছেড়ে দেওয়া হলে মোটর সাইকেলে করে বাড়ি ফিরতে পারবে কি না? উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।

“আমি অক্ষত অবস্থায় আমার স্বজন ও এলাকাবাসীর কাছে ফেরত আসতে পেরেছি; এ মুহূর্তে আর কিছু মনে করতে চাই না,” বলেন ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূল পর্যায়ের এই নেতা। 

গত ৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোটর সাইকেলে করে সাদুল্লাপুরের লালবাজার থেকে নলডাঙ্গা ফেরার সময় ১৫/১৬ জন লোক মনোয়ার ও সাদেককে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়েছিল।

এরপর হাতকড়া ও চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল বলে জানান সাদেক।

স্বজনদের সঙ্গে সাদেকুল ইসলাম

তিনি বলেন, তাকে ও মনোয়ারকে আলাদা কামরায় রাখা হয়েছিল। চোখ বাঁধা অবস্থায়ই তাদের তিন বেলা খাবার দেওয়া হত।

“এছাড়া আর কোনো কিছু মনে করতে পারছি না। তাছাড়া আমি এখন অসুস্থ,” বলেন সাদেক।

মনোয়ারের বাবা গোলাম মোস্তফা ডিপটি মণ্ডল বলেছিলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন অথবা বিশেষ মহলের ইন্ধনে জামায়াত-শিবিরের ‘সক্রিয় ক্যাডাররা’ এই দুজনকে ধরে নেয় বলে তার ধারণা।

কারা কেন তুলে নিয়েছিল, জানতে প্রশ্ন করলে তা এড়িয়ে যান মনোয়ার ও সাদেক দুজনই।

তাদের বিষয়ে সাদুল্লাপুর থানার ওসি ফরহাদ ইমরুল কায়েস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুজনের ফিরে আসার খবর তারা শুনেছেন। তবে কীভাবে ফেরত এসেছেন, তা তিনি জানেন না।

নিখোঁজ মাইদুল ইসলাম প্রিন্স ও শফিউল ইসলাম শাপলা

নিখোঁজ বাকি দুজন আওয়ামী লীগ নেতা প্রিন্স এবং যুবদল নেতা শাপলার সন্ধানে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান ওসি।

প্রিন্সের ভাই নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম নয়ন জানিয়েছিলেন, মনোয়ার ও সাদেককে তুলে নেওয়ার পরদিন ১০ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে কয়েকজন নলডাঙ্গা রেলগেইট এলাকা থেকে মোটর সাইকেলসহ তুলে নেয় তার ভাইকে।

একই দিন প্রায় একই সময়ে নলডাঙ্গার কাচারী বাজার এলাকায় সাদা পোশাকের কয়েকজন ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের পরিচয় দিয়ে শাপলাকে ধরে নেয় বলে তার বাবা আমিনুল ইসলাম জানান।

এক দিনের ব‌্যবধানে এই চার নেতা নিখোঁজ হওয়ার পর সাদুল্লাপুর থানায় অভিযোগ করেন তাদের স্বজনরা। তাদের সন্ধানের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, হরতাল-অবরোধ, মানববন্ধন, থানা ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।