সর্বোচ্চ সাজার আদেশ পাওয়া বাকি ১২ আসামিকেও সাজাপ্রাপ্ত বন্দির পোশাকে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির কক্ষে রাখা হয়েছে বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এছাড়া এ মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ পাওয়া আরও ছয় আসামি নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আছেন।
তিন বছর আগের ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে আদালত সোমবার মোট ৩৫ জনের সাজার আদেশ দেয়; তাদের মধ্যে ১২ জন পলাতক।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ ডুবিয়ে দেওয়া হয় শীতলক্ষ্যা নদীতে।
ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন সোমবার ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।
রায় ঘোষণার পর সোমবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, র্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার চাকরিচ্যুত মেজর আরিফ হোসেন, ক্যাম্প কমান্ডার চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা ও ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেনকে প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেলার নাশির আহমেদ জানান, কারাগারে পৌঁছানোর পরপরই মৃত্যুদণ্ডের পাঁচ আসামিকে সাদা-কালো ডোরা কাটা বন্দির পোশাক পরানো হয়।
“নিয়ম অনুযায়ী রাতেই তাদের ফাঁসির আসামিদের জন্য নির্ধারিত কক্ষ- কনডেম সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাদের বেশ চিন্তিত বলে মনে হয়েছে।”
কারা কর্মকর্তারা জানান, সোমবার রায়ের পর মঙ্গলবার দুপুরে এক আসামির ভাই কারাগারে এসে দেখা করে গেছেন। তবে নূর হোসেন বা তারেক সাঈদের কেউ আসেননি।
নারায়ণগঞ্জ কারাগারে এ মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যে ১২ আসামিকে রাখা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাতজন সাবেক র্যাব সদস্য, বাকিরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি নূর হোসেনের সহযোগী।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার মো. আসাদুর রহমান জানান, তার কারাগারে ফাঁসির আসামিদের সেল রয়েছে ১৫টি। জায়গা না থাকায় সাত খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামিকে আলাদা সেলে রাখা যায়নি। এক সেলে রাখা হয়েছে তিনজন করে।
“তাদেরকে সাজাপ্রাপ্ত বন্দির পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নারায়গঞ্জ কারাগারে আরও ১২ জন ফাঁসির আসামি আছেন। তারা যেভাবে রয়েছে, নতুনদেরও সেভাবে রাখা হয়েছে।”
আসাদুর রহমান বলেন, সোমবার কনডেম সেলে নেওয়ার পর ফাঁসির আসামিদের রাতে সবজি, ডাল, ভাত ও মাছ খেতে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে দেওয়া হয় রুটি আর গুড়। তারা তা খেয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে এস আই পূর্ণেন্দু বালা, হাবিলদার এমদাদুল হক, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, সিপাহী আবু তৈয়ব, আসাদুজ্জামান নূর, নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশারকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে রাখা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত কনস্টেবল বাবুল হাসান, কর্পোরাল রুহুল আমিন, সৈনিক নুরুজ্জামান, আবুল কালাম আজাদ, এএসআই বজলুর রহমান ও হাবিলদার নাসির উদ্দিনও আছেন এ কারাগারে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন এর আগে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এ কারণে তাকে প্রধান চার আসামির সঙ্গে কাশিপুর কারাগারে রাখা হয়েছে।
এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম বর্তমানে ভারতের কারাগারে বন্দি। এছাড়া সানা উল্লাহ ওরফে সানা, নূর হোসেনের ম্যানেজার শাহজাহান, জামাল উদ্দিন, সার্জেন্ট এনামুল কবীর, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আল আমিন শরীফ, সৈনিক তাজুল ইসলাম ও সৈনিক আব্দুল আলিম পলাতক।
এছাড়া পলাতক তিন আসামি কর্পোরাল মোখলেছুর রহমান, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান ও এএসআই কামাল হোসেনেরও কারাদণ্ডের রয়ে এসেছে আদালতে।
নিয়ম অনুযায়ী নিম্ন আদালতের মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য হাই কোর্টে যাবে। আসামিরাও আপিলের সুযোগ পাবেন। হাই কোর্টের রায়ের পর আপিল বিভাগেও যাওয়ার সুযোগ থাকবে। এই বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হলেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা কার্যকর করা যাবে।