আপিল করবেন নূর হোসেন, তারেক সাঈদ

নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলায় মৃত‌্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেন ও তারেক সাঈদ মোহাম্মদ হাই কোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে তাদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2017, 08:01 AM
Updated : 16 Jan 2017, 10:33 AM

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সময়ের স্থানীয় নেতা নূর হোসেন ২০১৪ সালে ওই হত‌্যাকাণ্ডের সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ছিলেন। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ছিলেন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল। ওই সময় নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

নূর হোসেন, তারেক সাঈদসহ এ মামলার ২৬ আসামিকে সোমবার মৃত‌্যুদণ্ড দিয়েছে নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত। মামলার বাকি নয় আসামিকে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড।

রায়ের পর আসামি নূর হোসেন ও তার সহযোগী মিজানুর রহমান দিপুর আইনজীবী খোকন সাহা সাংবাদিকদের বলেন, “আমার মক্কেলরা মনে করে, এটা তাদের বক্তব্য, আমাদের বক্তব্য না, তারা মনে করেন, তারা ঘটনার সাথে জড়িত না। সঠিক বিচার পায় নাই। তারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন। এটা হচ্ছে আমাদের মক্কেলের পক্ষে আমাদের বক্তব্য।”

তারেক সাঈদের বাবা মুজিবুর রহমান ও মৃত‌্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা এম এম রানার শাশুড়ি সুলতানা রহমান শিল্পী রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো মন্তব‌্য করতে চাননি। তবে তাদের আইনজীবীরা আপিল করার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

তারেক সাঈদের আইনজীবী সুলতানুজ্জামান বলেন, “আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। হাই কোর্টে আপিল করব, আশা করি প্রতিকার পাব।”

তিনি বলেন, “১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দেওয়া হয়েয়েছে তা ইনকালপিটরি নয়, এক্সকালপিটরি ইন নেচার। এর ওপর নির্ভর করে পূর্ণাঙ্গ শাস্তি দেওয়া যুক্তিযুক্ত বলে আমরা মনে করি না।”

তারেক সাঈদের আরেক আইনজীবী শাহাবুদ্দিন বলেন, “আবেগতাড়িত হয়ে রায় দিয়েছে। কোনো ধরনের প্রমাণ আদালতে হাজির করতে পারেনি। পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট দিলেই তো হবে না, সাক্ষ‌্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। তারিক সাঈদ (হত‌্যার) নির্দেশ দিয়েছে এ ধরনের কোনো কাগজপত্র বাদীপক্ষ আদালতে হাজির করতে পারেনি।”

বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানার আইনজীবী রিতা ইসলামও উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা সাংবাদিকদের বলেছেন।

এ মামলার আসামিদের মধ‌্যে আরেক র‌্যাব কর্মকর্তা বরখাস্ত মেজর আরিফকেও মৃত‌্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। তার হয়ে এ মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবীর এম এ রশিদ ভূইয়া।

রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বিজ্ঞ বিচারক বিচারিক বিবেচনায় এ রায় দিয়েছেন। আসামিপক্ষ যদি এ রায় ও দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হন, তারা আপিল করতে পারবেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপিল করলে আসামিপক্ষ সুফল পাবেন।”

এই রায়ে সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট- তা বলব না। এ বিষয়ে আসামি বলবেন। আপিল করলেও সেটা তিনিই করবেন। রায়ের ব‌্যাপারে কোনো মন্তব‌্য করতে পারব না।”

সাত খুনের ঘটনায় দণ্ডিত ৩৫ জনের মধ‌্যে ২৫ জনই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস‌্য। মামলার নথিতে বলা হয়, এলাকায় আধিপত্য নিয়ে বিরোধ থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে র‌্যাব সদস্যদের দিয়ে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।