লিটন হত্যায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা রিমান্ডে

গাইবান্ধার সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতার পর এবার আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন‌্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2017, 01:54 PM
Updated : 8 Jan 2017, 05:27 PM

হত‌্যাকাণ্ডের সাতদিন পর গ্রেপ্তার আহসান হাবিব মাসুদ এমপি লিটনের দল আওয়ামী লীগের সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কমিটির সদস‌্য।

উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদ জাসদ থেকে জাতীয় পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে এসেছেন।  

সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আতিয়ার রহমান জানান, রোববার সকালে উপজেলা শহরের বাসা থেকে মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে আদালতে পাঠানো হলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মইনুল হাসান ইউসুফ সাত দিনের রিমান্ডে পাঠান মাসুদকে।

তবে পরিবারের বরাত দিয়ে সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লিটন হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলা পুলিশ গত শুক্রবার মাসুদকে তুলে নিয়েছিল।

এরপর আর মাসুদ বাড়ি ফেরেননি বলে তার বড় ভাই গোলাম মুর্তজা টুকু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

লিটনের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব ছিল’ মাসুদের

মাসুদের সঙ্গে সংসদ সদস্য লিটনের দ্বন্দ্ব ছিল বলে জানিয়েছেন সুন্দরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতারা। এ দ্বন্দ্বের জেরে পাল্টাপাল্টি হামলা ও মামলার ঘটনাও রয়েছে।

মাসুদ ছাত্রজীবনে জাসদ ছাত্রলীগ করতেন বলে জানিয়েছেন মাসুদের বড় ভাই গোলাম মুর্তুজা টুকু। পরে জাতীয় পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে যো্গ দেন।

টুকু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাস করার পর সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জাসদে যোগ দেন। পরে ২০০৯ সালের জাতীয় পার্টির (এ) সমর্থন নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাসুদ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় ।

২০১০ সালে মাসুদ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগে যোগ দেন বলে জানান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও দহবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কবির মুকুল।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে সুন্দরগঞ্জ ডি ডাব্লুডি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগে যোগ দেন।”

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলজার রহমান বলেন, “আওয়ামী লীগে লিটনবিরোধী অংশের সক্রিয় নেতা ছিলেন মাসুদ। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে উপজেলা দলের বর্ধিত সভায় তাকে (মাসুদ) কমিটিতে পদ দেওয়া নিয়ে বেঁকে বসেন লিটন।

“এনিয়ে হট্টগোল শুরু হলে সভা স্থগিত করা হয়। পরে অডিটরিয়াম থেকে বের হয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের কাছে লিটনের উপর দলবল নিয়ে হামলা করেন মাসুদ। পরে ওই দিনই লিটন পক্ষ উপজেলা শহরের সোনালী ব্যাংক এলাকায় মাসুদের কনফেকশনারি দোকানে হামলা করে। এনিয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়।”

মাসুদের বড় ভাই টুকু বলেন, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি দুটি মামলাই আদালত থেকে খারিজ হয়ে যায়।

মাসুদ জেলায় জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন বলে আওয়ামী লীগের লিটন পক্ষের নেতাদের অভিযোগ। তারা বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে মাসুদকে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে এক প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-চালাতেও দেখা গেছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহমেদ বলেন, “মাসুদের সঙ্গে লিটনের ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল না। তবে মাসুদ দলের লিটনবিরোধী অংশে সম্পৃক্ত ছিলেন।”