প্রাথমিক শেষ করে এবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠা সৌরভ বলেছে, “খুব খারাপ লাগতিছে। আমাকে গুলি করছিল বলে এমপি সাহেবের শাস্তি চাইছিলাম। তার মৃত্যু চাই নাই।”
এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সৌরভের বাবা সাজু মিয়া।
২০১৫ সালের ২ অক্টোবর ভোরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের গোপালচরণ এলাকায় চাচার সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়ে সাংসদ লিটনের ছোড়া গুলিতে আহত হয় সৌরভ। দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ এই শিশুকে দীর্ঘদিন রংপুরের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়।
ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে বেশ কিছুদিন কারাগারে থেকে গত অগাস্টে জামিনে মুক্তি পান সুন্দরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা লিটন। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও হয়েছে।
সারা দেশে আলোড়ন তোলা ওই গুলির ঘটনার চৌদ্দ মাসের মাথায় শনিবার সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে করে আসা অজ্ঞাতপরিচয় তিন যুবক সুন্দরগঞ্জে বাড়িতে ঢুকে লিটনকে গুলি করে হত্যা করে।
রোববার সকালে উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের গোপালচরণ গ্রামে কথা হয় সৌরভ ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।
পঞ্চম শেষ করে এবার গোপালচরণ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে সৌরভ। কিন্তু নতুন বছরের প্রথম দিন স্কুলের বই উৎসবে যায়নি সে।
“প্রথম দিন স্কুলে নতুন বই দিচ্ছে। এমপি সাহেবের কথা খালি মনে পড়তিছে। কিছু ভালো লাগিতিছে না। বই আনতে স্কুলে যাই নাই, বই আনতে বাবা গেছিল।”
ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর দীর্ঘদিন শঙ্কা নিয়ে দিন কাটানো সাজু মিয়াও এমপি লিটনের এমন মৃত্যুতে ‘খারাপ লাগার’ কথা বলেছেন।
সাজু জানান, ছোট মেয়ের আকিকার অনুষ্ঠানের কার্ড দিতে চেয়েছিলেন সাংসদ লিটনকে; তা আর হল না।
“আমার চার মাসের মেয়ের আকিকা ১৩ জানুয়ারি। কার্ড ছাপাইছি। এমপি সাইবকে দাওয়াত দেওয়ার জন্যে একটা কার্ডে তার নামও লেখছি। ৫ জানুয়ারি মামলা তারিখ। তার আগে এমপি সাইবের সঙ্গে দেখা করে কার্ডটা দিয়া দাওয়াত করি আসবো ভাবছিলাম.....।
তিনি জানান, সাংসদ লিটনের গুলিতে আহত সৌরভ এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। যারাই এমপিকে হত্যা করে থাকুক, তাদের শাস্তি চান তিনি।
সাজু মিয়া বলেন, সৌরভকে গুলির মামলা নিয়ে কিছুদিন আগে এমপি লিটনের সঙ্গে তাদের ‘মৌখিক সমঝোতা’ হয়েছিল। লিটন ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দিতে রাজি হয়ে সৌরভের পরবর্তী ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতার কথা দিয়েছিলেন।
“এই তিন লাখ টাকা দিয়ে পরিবার ও সৌরভের ভালো ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, তাও আল্লাহ সহ্য করল না,” বলেন ফেরি করে হাড়ি-পাতিল বিক্রি করা সাজু মিয়া।